ঠাকুরগাঁওয়ে সমবায় সমিতির লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট !
মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতির লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে একটি চক্র। অপরদিকে দায় এড়াতে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে সমবায় কর্তৃপক্ষ। এতে করে চরম ক্ষতির আশঙ্কায় শত শত গ্রাহক। বিভিন্ন দফতরে গিয়েও মিলছে না সুরাহা। এ চিত্র শুধু রংধনু সমবায় সমিতির ক্ষেত্রেই নয়। এ চিত্র ঠাকুরগাঁও জেলায় একাধিক সমবায় সমিতিতে। অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সমবায়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে কোটি কোটি টাকার সম্পদও বিক্রী করে দিয়েছেন। যা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।
সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে রংধনু বহুমুখী সমাবায় সমিতি লি: ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ কলেজ বাজারে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ১’শ জন। কিন্তু পরবর্তীতে সমিতির কার্যক্রম বাড়ার সাথে সাথে সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, এক পর্যায় সমিতির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ২’শর অধিক। ২০০০ সালে রংধুন বহুমুখী সমবায় সমিতি সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন লাভ করে। কোটি কোটি টাকা সমিতির মূলধনও দাঁড়ায়। সমিতিটির ব্যাপক নাম ডাকও ছিল কিন্তু কমিটির অন্তোকন্দোল, অর্থ-আত্নসাৎ এবং কিছু নেতার স্বেচ্ছাচারিতার কারনে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে সমিতির কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সমবায় কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন বাতিল করে। সমিতির একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতি এক সময় উত্তর বঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সমিতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। কিন্তু কতিপয় ব্যাক্তির কারণে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং সদস্যদের জমানো লাখ লাখ টাকা, ভোগদখলীয় জমি, মটরসাইকেল, ৪টি মাক্রোবাস আত্নসাৎ করে একটি চক্র। আর এই চক্রের সদস্যরা হলেন- সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি সহ আরো অনেকে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। তবে আমিনুল ইসলাম এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই, আর গিয়াস উদ্দীন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ওসমান গণি অবসপ্রাপ্ত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, তিনি এখনও দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তারা প্রভাব খাটিয়ে এ সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে গিয়াস উদ্দীনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভূমি দখলেও অভিযোগ রয়েছে।
সমিতির এক ভূক্তভোগী সদস্য আমিরুল হক বলেন, সমিতিতে আমার প্রায় ৪৮ হাজার টাকা জমানো আছে। কিন্তু সেই টাকা কোন ভাবেই ফেরৎ পাচ্ছি না। সমিতির জায়গা ছিল, অনেক মালামাল ছিল সে গুলোও এখন ভোগদখল করে খাচ্ছেন একটি চক্র। সমিতির আরেক সদস্য আব্দুল বারি বলেন, আমি টাকা চাইতে গেলে আমাকে উল্টো ধমক দেখায়, আমাকে রাগ দেখায়। সমিতির জায়গায় ফলের দোকান করেন আবু বক্কর সিদ্দিক তিনি বলেন, অনেক টাকা জামানত দিয়ে আমি দোকান ঘর ভাড়া নিয়েছি গিয়াস উদ্দীনের কাছে। তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে যান। একই কথা বলেন, আরেক ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন তিনিও গিয়াসের কাছে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আলম বলেন, সমিতিটি এক সময় উত্তরবঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সমিতি ছিল। কিন্তু সমিতির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীনের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। সমিতির দোকান ঘর ছিল, যা সমিতির পক্ষ থেকে ভাড়া দেওয়া ছিল। কিন্তু গিয়াস উদ্দীন তা নিজের দখলে নিয়ে আত্নসাৎ করছে। রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমিনুল ইসলাম ও ওসমান গণি দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করে ফেলে। আবার ওসমানগনি বলেন প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পিছনে দায়ি গিয়াস উদ্দীন। আমিনুল ইসলাম বলেন, সমিতির হিসাব পত্র দিতো না ওসমান গণি, সে সমিতির টাকা নিয়ে নিজে ঋণদান সমিতি তৈরী করেছিল। সে সব টাকা সরিয়ে নেয়। পীরগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, কতিপয় অসাধু সদস্য নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমিতির সম্পদ এবং অর্থ লোপাট করার জন্য, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে নিববন্ধন বাতিল করেছেন। ভালো সমিতি ছিলো যেখানে ২০-২৫ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখে সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল হয়। তখন যারা ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তারাই নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করেছিল। অন্য কোন ভাবে বাতিল করার সুযোগ নেই।