ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শিষ, ধান ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা !
মোঃ মজিবর রহমান শেখ,, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার থোকায় থোকায় শোভা পেয়েছিল সবুজ ধান। ধানের গাছে থোকা থোকা শীষ দেখে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখেছিল কৃষকেরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ধানের থোকার প্রায় শীষগুলো সাদা হয়ে শুকিয়ে যাওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছেন তারা। উপজেলার ক্ষুদ্র বাঁশবাড়ী গ্রামের কৃষক সুমন পাটোয়ারী এবার প্রায় তিন বিঘা জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষাবাদ করেছেন। সুমন আহমেদ জানান, ধানের শীষ ভালোই হয়েছিল। হঠাৎ করেই ধানের প্রায় গাছের শীষগুলো প্রথমে সাদা, কালচে হয়ে পরে শুকিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অতি তাপমাত্রার কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে তারা জানিয়েছেন। কৃষক সুমন আহমেদ বলেন, তারা (কৃষি বিভাগ) চিন্তার কিছু নেই জানালেও দিনের পর দিন এই রোগের বিস্তার বাড়ছে বলে তিনি মনে করছেন। একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার সন্ধারই, বলিদ্বাড়া, কেউটান, ভান্ডারা এলাকা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনা-১৭ জাতের ধানের শীষ একইভাবে কালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধারই এলাকার কৃষক হোসেন আলী বলেন, আগাম জাতের ধান হিসাবে বিনা-১৭ ধানটি রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ধানটি হঠাৎ করেই অজানা এই রোগে আক্রান্ত হবে বুঝতে পারিনি। বলিদ্বাড়া এলাকার কৃষক মো. আবু হোসেন বলেন, প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষাবাদ করেছি। ধানের শীষ ভালোই বের হলো। কিন্তু ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমনের এ মৌসুমে রানীশংকৈল উপজেলা জুড়ে এবার মোট ২১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হচ্ছে। তারা আরও জানান, বিনা-১৭ ধানের গাছটি যখন ফুল অবস্থায় থাকে সেই সময়টার ৪-৫ দিন জমিতে যেন পানি ধরে রাখা হয়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রা হলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফুল অবস্থায় জমিতে পানিতে ধরে রাখতে পারলে এই সমস্যা হবেনা। নিদিষ্ট সময়ের আগেও কৃষকরা বীজ করেন। এটিও ঠিক নয়। এটি আবহাওয়াগত সমস্যা নয়। এটি মানবসৃষ্ট বিষয়। আমরা সবসময় এবিষয়ে কৃষকের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সন্ধারই-বনগাঁও ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম জানান, এটি ধানের একটি হিট স্ট্রোক নামের রোগ। এটি অতি তাপমাত্রার কারণে সংগঠিত হয়। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় যেসব শীষ অতি তাপমাত্রায় পড়েছে সেই সব ধানের শীষই এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। নতুন করে কোনো ধানের শীষ শুকানোর সম্ভবনা খুব কম।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম ১ অক্টোবর রবিবার মুঠোফোনে বলেন, এটি কোনো ব্যাপার না। অতি তাপমাত্রায় ধানের পরাগায়ন হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। ধান পরাগয়নের সময় জমিতে পানি থাকলে এই সমস্যাটি হতো না। তিনি আরও বলেন, ‘বিনা-১৭ একটি স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান। এটি খরাসহিষ্ণু, ৩০ শতাংশ পানি কম প্রয়োজন হয় এর চাষে। যে জমিতে দুটি ফসল হতো, সেখানে এ জাতের ধান চাষে এখন তিনটি ফসল করা সম্ভব। বিনা ধান-১৭ স্বল্প জীবনকালীন হওয়ায় ধান কাটার পর ওই একই জমিতে কৃষক সরিষা, মসুর বা আলু চাষ করতে পারবেন।’ উপজেলার কৃষকদের এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’