রংপুরে ভূমিদস্যু আজিজের ভয়ে আতংকিত নাছনিয়া মহল্লাবাসী।
মাটি মামুন রংপুর।
রংপুর মেট্রোপলিটন মাহিগঞ্জ থানাধীন রসিক’র ৩০নং ওয়ার্ড নাছনিয়া মৌজার সাধারণ মানুষের আতংকের নাম নব্য ভূমিদস্যু আব্দুল আজিজ।
তার ভয়ে তটস্থ গ্রামবাসী, জেলার পিতা-জেলা প্রশাসক, নগর পিতা- রসিক মেয়র।
জন-নিরাপত্তার অভিভাবক শান্তিপ্রিয় মানুষের বন্ধু পুলিশ কমিশনার, সড়ক ও জনপথ বিভাগ রংপুরে প্রধান নির্বাহী বরাবর লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ভূমিদস্যু আব্দুল আজিজের কুটকৌশলের কবল থেকে প্রতিকার চেয়েছেন।
গত ১৬ নভেম্বর’২৩ কয়েকশো বাসিন্দা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড গোড়াই মৌজার মৃত ছালাম ফকিরের বড় ছেলে আব্দুল আজিজের টাকার গরম ও মানুষকে জিম্মি করে তার ভিটামাটি কেনার অপকৌশল, বেশ আতংকের জন্ম দিয়েছে গোড়াই গ্রামসহ রসিক’র ৩০নং ওয়ার্ড নাছনিয়া মৌজায়। নাছনিয়া এলাকায় দুই মালিকের সম্পত্তির মাঝে প্রায় ২ হাত চওড়া ও ২৫০ হাত লম্বা জমি, ভূমিদস্যু ভূমির মালিককে বেকায়দায় ফেলে কেনাসহ অর্ধশত বছরের পুরনো রাস্তা জেনেও টাকার গরমে তা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে। জনগণের চলাচলের রাস্তায় থাকা আধা শতক জমি পরিকল্পিতভাবে কিনে প্রায় শত একর জমির চাষাবাদ বন্ধ করে দিতে মরিয়া আব্দুল আজিজ। সুবিধাবাদী আব্দুল আজিজ রাস্তায় আধা শতক জমির পরিবর্তে নিজের পছন্দমতো ১০ শতক জমির দাবী করেন বলে নিশ্চিত করেছেন নাছনিয়া মৌজার কয়েকশো মানুষ। আজিজের একাধিক স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ড দেখে স্থানীয়রা তাকে ভূমিদস্যু আজিজ নামেই চিনে। তাই প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুর্শা ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি আজিজের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, আজিজ জীবনে স্কুলের বারান্দায় না গেলেও অবৈধ টাকার জোরে অনেক নেতা ও প্রশাসনিক কতিপয় কর্মকর্তা তার ইশারায় চলেন। আজিজ ইতিপূর্বে তার সহোদর ছোট ভাই শাহজাহানের সাথে জালিয়াতি করে কুটকৌশলে পীরগাছা উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড শরীফ সুন্দর বাজার সংলগ্ন আজিরন ফিলিং স্টেশন (পেট্রোল পাম্প) লিখে নিয়েছেন। ছোট ভাইকে দমিয়ে রাখতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদেরকে বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়ান ও ছোট ভাইকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। আজিজ গ্রামে আসলে তার সাথে অপরিচিত মানুষকে দেখা যায়। এর আগে রংপুর সিটি মেয়র এসেছিলেন। ইতোপূর্বে যারাই আজিজের সান্নিধ্যে ও বাসায় আসেন, তাদের প্রভাব খাটিয়ে আজিজ যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে আমাদের গ্রামে বেশ জেদাজেদি করে জমির দাম বাড়িয়ে দিয়ে, বাড়ির রাস্তাসহ জমি কিনে, বর্ডার গার্ডে কর্মরত তারই এক আত্নীয়কে বেশ বেকায়দায় ফেলেছেন। এখন রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ইদানীং আজিজের ভয়ে এই গ্রামের মানুষকে হিসেব করে কথা বলতে হয়। আজিজের অন্যায় অনিয়ম ও তার অবৈধ পেশী শক্তির জোরে কেউ কিছু বললে তাকে ভয় দেখানো হয়। তার কিছু চামচা আছে, যারা ন্যায় অন্যায় কোন কিছুই বিবেচনা ছাড়াই গ্রামের মানুষকে ভয় দেখায়। আপনারা সাংবাদিক ভালো করে খোঁজ খবর নেন সবকিছু জানতে পারবেন।
নিজ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আজিজের গ্রামের প্রতিবেশী দুঃখ করে বলেন, আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ প্রবাসী। অনেকেই দীর্ঘ বছর যাবৎ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছেন, কিন্তু আজিজের মতো এতো টাকার গরম কারো নেই। আগে জানতাম সে প্রবাসীদের মজুরির কমিশন খায়। কিন্তু এখন তার ব্যাপারে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। প্রবাসীদের সাথে জুলুম করার কারণে অনেকেই তাকে ফেরাউন নামে চিনে। গ্রামের অনেক প্রবাসী জানে তার ফেরাউন নামের ব্যাপারে। আজিজের শ্বশুর ধর্ষণ পরবর্তী এক নারীকে হত্যা মামলায় দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ যাবৎ রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। আজিজের শ্যালকের বিরুদ্ধেও প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজিজের এক আত্নীয় বলেন, আজিজ ইদানীং টাকার গরমে মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চায় না।
কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের নিকট আজিজের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজিজ সাহেব ম্যান-পাওয়ারের বিজনেস করেন। তিনি সৌদিতে লোক পাঠায়। মাঝে মধ্যে গ্রামে আসেন, তার আপন ছোট ভাই শাহজাহানের নিকট প্রতারণা করে পেট্রোল পাম্প লিখে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মজিদ বলেন, প্রতারণা করে পাম্প লিখে নেয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে আমার ধারণা সেটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। ইদানীং তার বোন জামাই মাস্টার এসেছিল একটি জমি জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে। সর্বশেষ তারা আর কিছু জানায়নি। তবে পেট্রোল পাম্প লিখে নেয়ার বিষয়টি তথ্য প্রমাণসহ ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলে। দুই পক্ষের সাথে কথা বলে সমাধান করা যাবে। আজিজের পাম্প সংলগ্ন শরীফ সুন্দর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আজিজ একটা প্রতারক গেল কয়েক মাস আগে একাধিকবার তার মালিকানা মেসার্স আজিরন ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি মাপে কম দেয়ার অপরাধে, প্রতিষ্ঠানটি সীলগালা করা হয়েছিল। পরে জরিমানা দিয়ে পুনরায় পাম্প চালু করেছে। শুধু তাই নয় আমাদের চোখের সামনে তার ছোট ভাই শাজাহানকে ঠকিয়ে এই পাম্পটি লিখে নিয়েছে। যে ব্যক্তি আপন ভাইকে ঠকাতে পারে সে আর যাইহোক মানুষ নয়, এ সময় অত্র ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নাছনিয়া মৌজাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোশাররফ হোসেনের ছেলে মোক্তার হোসেন মঙ্গল বলেন, আমরা শৈশব থেকেই যেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেছি। হঠাৎ করে গোপনে প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো রাস্তা জেনেও রাস্তার মুখে হাফ শতক জমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কিনে নিয়েছে আজিজ! আমরা জানার পর মাতা মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে রাস্তার বিষয়টি তাকে অবগত করি। তিনি রাস্তা দিবেনা মর্মে জানালে, আমরা তার হাফ শতক জমির উচিৎ মুল্য পরিশোধ করার কথা বলি। তিনি হাফ শতক জমির পরিবর্তে, তার পছন্দ মতো ১০ শতক জমি কিনে চান! তার এহেন বিবেকহীন আচরণে আমরা বাকরুদ্ধ। বিষয়টি আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোতা ও মাহিগঞ্জ মেট্রোপলিটন থানার ওসি অবগত আছেন।