★বৃদ্ধাশ্রম থেকে বৃদ্ধা মায়ের আকুতিভরা চিঠি।
রচনাঃ এ এস এম সাদেকুল ইসলাম
আজ কতদিন হল
তরে দেখি না রে খোকা
কেমন আছস তুই বাপ,
আচ্ছা বউ মা ভালো আছে?
ভালো আছো তো আমার দাদু
ভাই টিটু, দাদু কী ইস্কুলে গাড়ি দিয়া যায়, ডাইভার বাপুরে সাবধানে গাড়ি চালাবার কইবি।
আমার বড্ড মনে পরে তোদের কে।
কি খেয়েছিস তুই ?
আচ্ছা! তোর কি মনে পরে
তুই খির পোয়া পিঠা খেতে
খুব ভালোবাসতি
আমি তোর বাপের
বাজার খরচা থেকে
এক টাকা দুই টাকা করে বাঁচিয়ে পাশের বাড়ির মইন্নাকে দিয়ে
তেল চিনি আনিয়ে তোর জন্য
খির- পোয়া পিঠা
বানিয়ে চুলার কোনে বসিয়ে
তুরে খাওয়াতাম।
তুই পেট ভরে খেয়ে বলতি আম্মা খুব মজা হয়েছে।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম
তোর পরিতৃপ্তি নিঃশ্বাস
হাস্যজ্জল মুখ,
আর আমি না খেয়েও
অনেক তৃপ্তিকর অনুভূতি অনুভব করতাম,
কেন তৃপ্তি পাবো না?
আমার খোকা আমার লাল চাঁন
পেট ভরে খেয়েছে,
ও যে আমার ই পেট থেকে হয়েছে।। আমি ওর মা।
তুই যখন কান্না করতি বাজারে যাওয়ার জন্য,
তোর বাপ বলতো,
চাল তরকারী কিনলে কি
ওর আব্দার পুরা করতে পারবো? আমি বলতাম ওগো-
ও কে নিয়ে যাও
ওর আব্দার পুরা করার পর
যদি থাকে দুটো পয়সা
তো ফের বাজার করবে,
কি আর করবে
ও যে আমার নাড় কাটা মানিক।
ও খুশি হলেই আমি খুশি।।
খোকা তুই যে ঘরে থাকিস
ও ঘর তো ফ্লাট ঘর, তাই না!!
খুব ছুন্দরও দেখতে
মাইজাল মুজাইক রং কালার করা।
আচ্ছা খোকা তুই কি
ডাইনিং টেবিল, চেয়ারে বসে খেতে
বসিস্?
তোর কি মনে আছে খোকা?
এক পিরিতে বসে আরেক
পিরিতে থালা
বাটি রেখে পরে খেতি
আজ কত সুখি তুই
আমার বুকটা ভরে যায়।
আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই।
কিন্তুু আমার কষ্ট লাগে একটাই,
আমার খোকা আজ
আমার কাছে নাই।
আমি কিছু চাই না খোকা
আমি শুধু বউ মার ঘরের কাজে যোগান দিমু, তোর ফেলাটে কাজের লোকতো লাগেই আমি সেই কাজ করে দিমু তবুও তোর মুখখানা দেখবার পামু।
আমি কিচ্ছু কইতাম না, বউ মা যা খুশি ,তাই করুক। যেমনে খুশি চলুক।
আমি শাশুরীর পরিচয় ছাড়াই থাকমু
বউ মা যা বলবে, আমি সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মাইন্না চলমু। আমি কিচ্ছু কইতাম না,
আমি শুধু আমার খোকার
মা হিসাবে থাকতে চাই।
তুই আমারে এখান থেকে
নিয়া যা-
আমি তোর মুখটা দেইখা দেইখা দিন
কাটবো মনকে সুখ দিবো।
আমি তোর ফ্লাটের বাড়িন্দায় থাকমু
তবুও আমায় তোর কাছে নে-
আমি তোর মুখ দেখতে দেখতে মইরা
যাবার চাই।
কত যে কষ্ট হয়েছিলো
তোর জন্মের দিন রে পুত
কিন্তুু তরে দেখে আমি সব ভুলে গেছি, সেদিন শাওন মাস ছিল মুষলদারে বৃষ্টি আর বৃষ্টি কেউ
ছিলো না ঘরে-
আমি একা অন্ধকার আর অন্ধকার’ ঘোর অন্ধকার,
কুপি বাতিতে তেল ছিলো না।
ছিলো না আর কেউ আমার পাশে- কষ্টের জ্বালাময়ী যন্ত্রনায় ছটফট
করে মরণ আকাংখায় স্বকাতর হয়ে হাউ মাউ করে কেঁদেছিলাম
সেদিন আমার ক্রন্দন কন্ঠধ্বণি
কেউ শোনছিল না,
তবুও চেয়েছিলাম আমার মরণ হোক, কিন্তুু,আমার মানিক চাঁন
বাইচ্ছা থাহুক।
আজোও সেদিনের
চাওয়াই আজ চাইবো,
তুই হাজার বছর বেঁচে থাক
আমি তোর মুখ দেইখা দেইখা মইরা
যাইবো। তবুও আয় বাবা
আমারে তোর কাছে লইয়া যা, মাইনশে কয় এইডা নাকি বৃদ্ধাশ্রম!
বৃদ্ধাশ্রম কি রে খোকা?
বৃদ্ধাশ্রম কি তোর কাছ
থেকে আমারে দুরে রাখা!