৪ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের প্রচেষ্টায়-কঠোর নজরদারিতে বিজিবি
কক্সবাজার জেলা থেকে
কামরুন তানিয়া
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশের তীব্র চেষ্টায় বার্মার (মিয়ানমারের)রোহিঙ্গা নাগরিকগণ।মিয়ানমারের দেশটির মংডু এলাকার আরো সাড়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা ওঁতপেতে আছে টেকনাফ সীমান্তের ওপারে। টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে তৎপর সীমান্তবর্তী কয়েকশ দালাল। এ অবস্থায় তাদের প্রতিরোধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে নাফ নদীতে টহল জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে ফের বড় ধরনের অনুপ্রবেশের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ।
টেকনাফ এবং নাফ নদী সীমান্তবর্তী নলবুনিয়া, পেরংপুর, নুরুল্লাপাড়া, আজিজের বিল, কাদির বিল, মেগিচং, মাংগালা, ফাদংচা এবং হাসুরাতা অঞ্চলে এসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
গত দুই সপ্তাহে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং উপকূল রক্ষী কোস্টগার্ডের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক চেষ্টা করেও বাংলাদেশের বান্দরবানের তুমব্রু-ঘুমধুম-কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল-থাইংখালী, টেকনাফের হোয়াক্যং-খেরাংখালী সীমান্ত দিয়ে কোনও রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫৪ কিলোমিটার বিস্তৃত নাফ নদী এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে দালালদের টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব রোহিঙ্গাকে কৌশলে বাংলাদেশে নিয়ে আসার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে সীমান্তবর্তী দালাল চক্র।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের টেকনাফের কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার এইচ এম লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নাফ নদীর সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। দালাল চক্র যেন স্বক্রীয় হতে না পারে, সে কারণে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলে সমিতির সভাপতিদের ডেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কাউকে যেনো এ ধরণের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে দেখা না যায়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, এখানে যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আছে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে মিয়ানমারে রয়েছে। তাদেরকে এ দেশে আনার একটি প্রচেষ্টা অভ্যন্তরে হতে পারে। এ বিষয়টি বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং স্থানীয় সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে করছে।
ডিআইজি মিনা আরো বলেন এদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিনিধি, দালাল কেউ যাতে কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে না পারে, সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
২০১৭ সালের দিকে উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া এবং টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে উল্লেখযোগ্য রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল বাংলাদেশে। সংঘবদ্ধ দালাল চক্র প্রথম দিকে মাছ ধরা নৌকা এবং ট্রলার দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল। তবে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অংশ হিসেবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও।
এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গুরুত্বসহকারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে ।কিন্তু এদিকে মিয়ানমারের মংডু এলাকায় থেমে থেমে গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। যার বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা গুলির আতঙ্কে মধ্যে দিন-রাত কাটাচ্ছেন।ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গোলাগুলির শব্দে ভয়ে কান্নায় সারারাত সজাগ থাকে। মাঝে মাঝে ওপারের ছোড়া গোলা বাংলাদেশেও এসে পড়ছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
ইতিমধ্যে অনেক ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে টেকনাফ - উখিয়ার লোকজন এসবের সম্মুখীন হয়েছে।