লেখক-শেখ খুরশিদ আলম নূরী রিজভী
হাদিসের ভাষায় শবে বরাতকে "লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান" বলা হয়,অর্থাৎ-"শাবান মাসের ১৫তম রাত"।আমাদের সমাজে প্রচলিত নাম হলো "শবে বরাত"। এই রাতটিকে "লাইলাতুল মুবারাকাহও'' বলা হয়। দিন একই শুধু নাম আলাদা আলাদা।শবে বরাত বল্লে সর্ব সাধারণ সকলেই চেনেন এবং বুঝেন।এই রাতটিকে কেন্দ্র করে নফল বা মুস্তাহাব কিছু কাজ করা হয়,এটা আমরা সকলেই জানি,আর মুস্তাহাব বা নফল কাজের পক্ষে দ্বইফ হাদিসই যথেষ্ঠ(যারা উসূলে হাদিসে পারদর্শি তারা এই উসূলটি অবশ্যই জানেন), যদি এর বিপক্ষে কোন সহীহ্ হাদিস না থাকে,বা কুরআনি নিষেধাজ্ঞা না থাকে।
★এই দিনের পক্ষে প্রথমে একটি হাসান হাদিস উল্লেখ
করছি-
حَدَّثَنَا رَاشِدُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ أَيْمَنَ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَرْزَبٍ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ " . حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَسْوَدِ النَّضْرُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ نَحْوَهُ .
হযরত আবূ মূসা আল-আশআরী (রদ্বিয়াল্লাহু আনহহু) থেকে বর্ণিত।হযরত রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেনঃমহান আল্লাহ নিশ্চই মধ্য শাবানের রাতে(তাঁর বিশেষ রহমত)প্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।
( সুনানে ইবনু মাজাহ হাদিস নং ১৩৯০,মান হাসান)
এই রাতে মুসলিম উম্মাহ রাত্রি জেগে নফল ইবাদাত বিশেষ করে নফল সালাত আদায় করে এবং পরের দিন নফল সিয়াম তথা রোজা রাখে,এ বিষয়টি বিদআহ নয়,মুস্তাহাব।বরং প্রিয় রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ, এ বিষয়ে একটি দ্বঈফ হাদিস উল্লেখ করছি-
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلاَّلُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَنْبَأَنَا ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا . فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ " .
হযরত আলী ইবনু আবূ তালিব (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,প্রিয় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাতের) আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায) পড়ো এবং এর দিনে সাওম রাখো। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর মহান আল্লাহ (এর বিশেষ রহমতের তাজাল্লী) পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসে এবং বলেন: কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী ? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী ? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী? আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছো এই প্রার্থনাকারী ?ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।
★(সুনানে ইবনু মাজাহ হাদিস নং ১৩৮৮,মান দ্বইফ)
বি দ্র: হাদিসটির মান দ্বইফ হলেও মুস্তাহাব আমল ও ফযীলতের পক্ষে দলিল (আল হামদুলিল্লাহি)। দ্বইফ হাদিসের হুকুম বিষয়ে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করছি, প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফক্বীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন-
قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف
উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল (দ্বইফ) হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।
( ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ,১/২০ পৃ.)
★ বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী হানাফী (رحمة الله) ‘তাফসীরে রুহুল বায়ানে’ লিখেন-
لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب
তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায়েয।
( আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান, ২/৪১০ পৃ.)
★এ বিষয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) লিখেন,
وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا
দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে।
(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওজু'আতুল কাবীর : ১/৩১৫ পৃ. হা/৪৩৩)
লাইলাতুল বারাতের রাতে মুসলিম উম্মাহ(পুরুষগণ) কবর যিয়ারত করে, এটিও বিদআহ নয় বরং মুস্তাহাব।
حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْخُزَاعِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ أَبُو بَكْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَنْبَأَنَا حَجَّاجٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ فَقَدْتُ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَخَرَجْتُ أَطْلُبُهُ فَإِذَا هُوَ بِالْبَقِيعِ رَافِعٌ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ " . قَالَتْ قَدْ قُلْتُ وَمَا بِي ذَلِكَ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ . فَقَالَ " إِنَّ اللّ