তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি):
নীলফামারীর সৈয়দপুরে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ায় দ্রুত সংষ্কারের দাবীতে প্রতীক অনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সৈয়দপুরে পৌর এলাকার ৯০ শতাংশ রাস্তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে কোন রাস্তা সংষ্কার না করায় চরম ভোগান্তী পোহাচ্ছে পৌরবাসী। এসব রাস্তা দ্রুত মেরামতের দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। এরই অংশ হিসেবে এবার প্রতীক অনশন কর্মসূচী পালন করেছে সৈয়দপুরের সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত শহরের ৭ টি পয়েন্টে এই প্রতীক অনশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি, সম্মিলিত বাম সংগঠন, স্বর্ণ কারিগর ও ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন পৃথক পৃথক স্থানে অবস্থান নেয়। এছাড়া অটো চালকরা গাড়ী বন্ধ রেখে কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করে। যোগ দেয় মিডিয়া কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
ওয়াপদা মোড়, গোলাহাট বাজার, চিনি মসজিদ মোড়, থানার সামনে, ১ নং রেলওয়ে ঘুমটি ও শিল্প সাহিত্য পরিষদ মার্কেটের সামনে আনুষ্ঠানিক প্রতীক অনশনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ম আ শামীম, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জাভিস্কো, ওয়ার্কাস পার্টির উপজেলা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, জাসদ (ইনু) উপজেলা সভাপতি আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক আশিক জনি।
এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষক সমিতির উপজেলা শাখা সভাপতি আবুল ফজল টুটুল, সহ-সভাপতি মজিবর রহমান, যুব মৈত্রীর সভাপতি ওবায়দুর রহমান, বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কন্যাণ সোসাইটি উপজেলা শাখার সভাপতি পৌর কাউন্সিলর শাহীন হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিএনজি চালক সমবায় সমিতির সভাপতি দুলাল হোসেন সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গও বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, সৈয়দপুর পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী চরম নির্লজ্জ ও দূর্নীতিবাজ। যে কারণে পৌরবাসী লাগাতার আন্দোলন করলেও তিনি ভ্রুক্ষেপ করছেন না। জনগণের ট্যাস্কের টাকা লুটে আখের গোছাচ্ছেন অথচ জনদাবী মানছেননা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভার ২০০ কিলোমিটার রাস্তার ২০ কিলোমিটারও ভালো নেই। জনসেবার কোন কাজই করেননি। উন্নয়নের বদলে চরম অবনতি হয়েছে সৈয়দপুরের।
তারা বলেন, গত ৩ বছরে তিনি শুধু লুটপাট করেই চলেছেন। নানা ফান্ড থেকে প্রায় শত কোটি টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি কোথায় কতগুলো বাড়ি করেছেন, কোথায় টাকা গচ্ছিত রেখেছেন, কারা তার দূর্নীতির দোসর। সবই আমাদের জানা আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছেন। এই পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেই আমরা দুদকে মামলা দায়ের করবো। তখন দেখা যাবে কে রক্ষা করে।
বক্তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেহাল ওয়াপদা মোড় থেকে তামান্না মোড় পযন্ত ৪ কিলোমিটার এবং শহীদ তুলশীরাম সড়ক থেকে শহীদ জহুরুল হক সড়ক হয়ে মিস্ত্রিপাড়া মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের দাবী জানান। এতে ব্যর্থ হলে পৌর মেয়রের পদত্যাগের জোর দাবী জানান। নয়তো সম্মিলিতভাবে পৌরসভা ও মেয়রের বাড়ী ঘেরাও কর্মসূচী দেয়া হবে। এতেও কাজ না হলে রাস্তা অবরোধ করে শহর অচল করে দেয়া হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারী সকালে একইভাবে পৌর এলাকায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। এতেও বিভিন্ন সংগঠন অংশ গ্রহণ করেন! তাছাড়া অটো শ্রমিকরাও কর্মবিরতি ও পৌর পরিষদ ভবন ঘেরাও করে। একমাস আগে গোলাহাট এলাকাবাসী শিশু, নারী পুরুষ হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধন করে। মানুষের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। এই বিক্ষোভ জনরোষে পরিণত হলে সৈয়দপুরে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।
যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শনিবার। এদিন গোলাহাট এলাকায় অনশন চলাকালে রাস্তায় সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুদ্ধ লোকজন। এতে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এসে সাড়ে ১২ টার দিকেই কর্মসূচী থামানোর আহ্বান জানান। ফলে সৈয়দপুর উপজেলা ইজিবাইক মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড এর প্রধান কার্যালয়ের সামনের গণজমায়েত স্থগিত করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এসময় স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সময়ের আগেই আন্দোলন বন্ধ করায় তারা ইজিবাইক মালিক সমবায় সমিতির অফিসে হামলা করে চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। যা নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান সৈয়দপুরের বাইরে থাকায়, তার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।