সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
সৈয়দপুরে তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর মানববন্ধন গাজীপুরের মৌচাকে ৭২ ঘন্টায় “শিহান” হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতার নুরুল হিকমাহ মাদরাসায় বিশিষ্টজনদের সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সৈয়দপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করে জামায়াত সৈয়দপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান মহান আল্লাহ মদ ও মদের অর্জিত মূল্য হারাম করেছেন সোস এর উদ্যােগে বর্ণাঢ্য  র‍্যালি ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত পীরগঞ্জে পূবালী ব্যাংকের ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ)’র পবিত্র খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা ও মাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ছোট বাচ্চা শিশুদের আদর স্নেহ করাও ইবাদাত

প্রতিবেদক এর নাম / ২২৫ বার পড়া হয়েছে
বর্তমান সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন

মোঃ মাসুদ রানা স্টাফ রিপোর্টার

 

ইসলাম একটি স্বাভাবিকসুুলভ ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার কথা বলে। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার ও কর্তব্যের কথা বলে। মানবশিশু মানবসমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুরাই আগামীর উৎস। তাদের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। কাজেই শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। নবী (সা.)-এর হৃদয়ে শিশুদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অকৃত্রিম মমত্ববোধ ছিল।

শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা : শিশুর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রদর্শন ইসলামের সৌন্দর্যসমূহের অন্যতম। তাদের প্রতি মায়া-মমতা দেখানো মহানবী (সা.)-এর সুন্নত ও আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৪; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৫০)।

এতিম শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া : নিজের সন্তানসহ সব শিশুর প্রতিই স্নেহ-ভালোবাসা দেখাতে হবে। বিশেষ করে এতিম শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা প্রদর্শনের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হতে হবে। তাদের প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ করতে নবী (সা.) অনেক বেশি উৎসাহিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি এমন লোককে দেখেছ, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে? সে তো ওই ব্যক্তি যে অনাথকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়।’ (সুরা : মাউন, আয়াত : ১-২)।

সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে কাছাকাছি থাকব। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দ্বারা ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মাঝে সামান্য ফাঁক রাখেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৯৮)।

শিশুদের ভালোবেসে চুমু দেওয়া : শিশুদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন এবং ভালোবেসে কাছে টানা, চুমু দেওয়া স্বভাবসুলভ ও মানবিক আচরণ। এগুলোই ইসলামের বিধান। নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর সখ্য ও আন্তরিকতার গল্পগুলো এমন হতেই উৎসাহ জোগায়। দয়াহীন মানুষের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান ইবনে আলী (রা.)-কে ভালোবেসে চুমু খেলেন। সেখানে আকরা ইবনে হাবেস আত-তামিমি (রা.) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ১০ জন সন্তান আছে; আমি তাদের কাউকে কখনো চুমু খাইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকান এবং বলেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫১)।

প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া : শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুরাও আল্লাহর সৃষ্টি। তাদের অবজ্ঞা বা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এ অবস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) সেখানে উপস্থিত হয়ে নবী (সা.)-কে দ্বিন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার অনুরোধ করেন। এতে আলোচনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় নবী (সা.) একটু বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি কুরাইশ নেতাদের মন রক্ষার্থে প্রতিবন্ধী সাহাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। মহান আল্লাহর কাছে বিষয়টি পছন্দনীয় হয়নি। তখনই প্রতিবন্ধীদের অধিকারবিষয়ক আয়াত নাজিল হয়। আল্লাহ বলেন, ‘সে ভ্রুকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এলো। তুমি কেমন করে জানবে, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করত। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে পরোয়া করে না, তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছ।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ১-৬)।

এরপর নবী (সা.) প্রতিবন্ধীদের সর্বদাই অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।

নবী (সা.)-কে নাতিদের সোয়ারি বানানো : কখনো হাসান ও হুসাইন (রা.) বিশ্বনবী (সা.)-এর কাঁধে উঠে তাঁকে সোয়ারি বানিয়েছেন। এতে নবী (সা.) বিরক্ত না হয়ে বরং সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার এর চেয়ে সুন্দর দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে? হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক এশার নামাজে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান অথবা হুসাইনকে কোলে নিয়ে আমাদের দিকে বেরিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। তারপর নামাজের জন্য তাকবির বলেন ও নামাজ আদায় করেন। নামাজে একটি সিজদা লম্বা করলেন। আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা উঠালাম এবং দেখলাম, ওই ছেলেটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিঠের ওপর আর আর তিনি সিজদারত। আমি সিজদায় ফিরে গেলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আপনার নামাজে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে অথবা আপনার ওপর ওহি নাজিল হয়েছে! তিনি বলেন, ‘এর কোনোটিই নয়; বরং আমার এ সন্তান আমাকে সোয়ারি বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।’ (নাসাঈ, হাদিস : ৭২৭)।

পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে বেড়ে তুলতে হবে। যথার্থভাবে যত্ন নিয়ে আদব-কায়দা ও ইসলামী মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হবে। তাহলেই তারা সত্য, সুন্দর ও ন্যয়ের পথে পরিচালিত হবে। ফলে দেশ ও জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে, ইনশাআল্লাহ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর