সাহসিকতার পুরস্কার
কিশোর, মুসা ও রবিন।
লেখক :
রাফসান সামি লাবিব
পঞ্চম শ্রেণি, বগুড়া জিলা স্কুল।
কিশোররা গরমের ছুটি কাটাতে পাহাড়ে বেড়াতে গেছে। ওরা ৩ জন আর সাথে ওদের গাইড আরমান ভাই।
কিশোর : দেখো, চারদিকটা কত সুন্দর।
রবিন : হ্যাঁ, কিশোর ঠিক বলেছ।
মুসা : এমনিতে তো জায়গাটা সুন্দর। কিন্তু রাতের বেলা যদি ভূত চলে আসে, তখন কী হবে?
রবিন : কি আর হবে? তোমাকে তুলে নিয়ে যাবে।
কিশোর : ঠিক বলেছ।
আরমান ভাই : কি? কেমন লাগছে তোমাদের?
কিশোর : খুবই ভালো লাগছে আরমান ভাই।
রবিন : হ্যাঁ, সত্যিই খুব ভালো লাগছে। পাহাড়ের পাশে ক্যাম্প করে ওদের তাবু টানানো হয়েছে। ওরা চারদিকটা ঘুরে সন্ধ্যায় ক্যাম্পে গেল। আরমান ভাই
খাবারের ব্যবস্থাও করে রেখেছেন। পরোটা, মাংস আর মিষ্টি।
মুসা : বাহ্, চমৎকার! এটা হচ্ছে আজ সারাদিনের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার। সবাই হেসে উঠল মুসার কথা শুনে।
রবিন : ঠিকই বলেছ।
আরমান ভাইও রাতে ওদের সাথেই থাকলেন। সকালে উঠে আরমান ভাই ওদের একটা ব্যাচ দেখালো।
আরমান ভাই : এই ব্যাচটা হলো সাহসিকতার ব্যাচ। যে বেশি সাহসের কাজ করে সে এটা পায়।
মুসা : বাহ্, ব্যাচটা তো খুব সুন্দর।
কিশোর আর রবিনও একমত হলো ওর সাথে। বিকালে ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর চারপাশটা দেখছিল। হঠাৎ মুসা জঙ্গলের দিকে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখল। জিনিসটা কি তা দেখার জন্য এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর কিশোররা পিছনে তাকিয়ে দেখল মুসা নেই। ওরা মুসাকে কয়েকবার ডাকল। কিন্তু কোনো সাড়া পেল না।
রবিন : কি ব্যাপরা! কোথায় গেল ও?
কিশোর : আমিও তো সেটাই ভাবছি।
আরমান ভাই : চলো জঙ্গলের দিকে গিয়ে দেখি। খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের ভিতর গিয়ে ওরা একটা বাড়ি দেখতে পেল।
রবিন : আমার মনে হয় মুসা এখানেই আছে।
কিশোর : আমারও তাই মনে হয়। চলো গিয়ে দেখি। এমন সময় লোকজনের আসার শব্দ পেয়ে ওরা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। দেখতে পেল, দুইজন লোক কিছু কাগজ হাতে বাড়িটার দিকে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে একটা কাগজ পড়ে গেল। লোকগুলো চলে যাওয়ার পর ওরা
গিয়ে কাগজটা তুলে নিল।আরমান ভাই : এই কাগজ তো টাকা ছাপাতে ব্যবহৃত হয়।
রবিন : কিশোর, এই কাগজ দিয়ে ওরা কী করবে?
কিশোর : আমার মনে হয় ওরা কোনো বেআইনি কাজ করছে।
রবিন : চলো ভেতরে যাই।
তারপর ধীরে ধীরে কোন শব্দ না করে ওরা তিনজন ভিতরে গেল। ভেতরে ঢুকেই দেখল মুসাকে একটা পিলারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
মুসা : কিশোর! তোমরা এসেছ?
কিশোর : তোমার এই অবস্থা কেন মুসা? এমন সময় ওপর থেকে দুজন লোক নেমে আসে। কিশোরদের দেখেই একটা লোক বলে উঠল ‘‘এই ছেলে, তোমরা
কারা? এখানে কী করছো?’’
আরেকজন বলল ‘‘ মনে হচ্ছে এই ছেলেটার বন্ধু’’। আগের লোকটা বলল, ‘‘তাহলে তো এদেরকেও বেঁধে ফেলতে হয়’’। এই বলে লোকগুলো ওদেরকে ধরতে এলে কিশোর পকেটে থাকা মারবেলগুলো লোক দুইটার সামনের মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়। লোক দুটো আছাড় খেয়ে পড়ে যায়। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ওপর থেকে আরও দুজন লোক আসে। ওদের একজনের হাতে একটা পিস্তল। কিশোর বুঝতে পারে যে, ওরা সবাই একসাথে পালাতে পারবে না। তাই রবিনকে বলল, তাড়াতাড়ি থানায় গিয়ে খবর দিতে বলল। আর ওরা লোকগুলোকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে থাকে। কিশোরের কথামতো রবিন ধীরে ধীরে ওখান থেকে সরে যায়।
কিশোর : আপনারা কারা? এখানে কী করছেন?
লোকটা : এই ছোকরা চুপ কর। এর উত্তর তোমাকে কেন দেব?
ততক্ষণে নিচে পড়ে থাকা লোকগুলো উঠে দাঁড়িয়েছে। এই সময় আগের লোকটা রবিনকে দেখে ফেলে। আগের লোকটা, তোমরা ঐ ছেলেটাকে পিছু করো।
এরপর বাকি ২ জন দড়ি নিয়ে ওদেরকে বাঁ ধতে যায়। ওরা কাছে আসতেই কিশোর লাথি মেরে লোকটার হাত থেকে
বন্দুকটা ফেলে দেয় কিশোর। এরপর কিশোর আর মুসা দুজনেই ওপরে যায়। দেখতে পায় অনেকগুলো নোট পড়ে
আছে। হাতে নিয়ে দেখে নোটগুলো জাল। এমন সময় কে যেন পিছন থেকে কিশোরের মাথায় বন্দুক ধরে। মুসা লাথি
মেরে লোকটার হাত থেকে বন্দুক ফেলে দেয়। তখনই কিশোর উল্টা ঘুরে জুতোর প্যাঁচ মেরে লোকটাকে ধাক্কা মেরে
ফেলে দেয় এবং পাশে থাকা দড়ি দিয়ে লোকটাকে বেঁধে ফেলে। এমন সময় আরমান ভাই ওদেরকে ডাকে। ওরা
নিচে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখতে পায় বাকি দুজন লোক ফিরে আসছে। ওরা তাড়াতাড়ি লোক দুটোকে কাবু করার প্লান করে ফেলে। লোক দুটো বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই ওরা একসাথে আক্রমণ করে লোকগুলোকে কাবু করে ফেলে। এমন সময় কিশোর রবিনের গলা শুনতে পায়। বাইরে গিয়ে দেখে রবিন পুলিশ নিয়ে এসেছে।
কিশোর : লোকগুলো ভিতরে আছে।
পুলিশ চিফ : তোমরা ঠিক আছো দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।
একজন পুলিশ : স্যার ভিতর থেকে এই জাল নোটগুলো পেলাম।
মুসা : আরে! এগুলো দেখেই তো আমি জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে ছিলাম।
রবিন : ওহে! তাই তো ভাবি তুমি এখানে আটকা পড়লে কিভাবে।
পুলিশ চিফ : তোমাদের ধন্যবাদ। এদের আমরা অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম।
কিশোর : ইট্স ওকে স্যার।
পুলিশ চিফ : তোমাদের সাহসিকতার জন্য এই ব্যাচটি তোমাদের প্রাপ্য।
মুসা : আরে! এটা তো আরমান ভাইয়ের ব্যাচের মতো।
পুলিশ চিফ তাদের তিনজনকে তিনটি ব্যাচ পরিয়ে দিলেন।