রংপুরে নারী ও শিশু আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
মাটি মামুন রংপুর।
তপ্ত রোদে প্রকৃতিতে হা হুতাশ।
চারদিক খা খা করছে।
থমকে আছে সিগ্ধ বাতাস। এমন অসহনীয় মধ্য দুপুরে হাঁটু পানি নদীতে দৌঁড়ে পার হচ্ছে একঝাঁক শিশু।
একই সময়ে কাগজের বড় দুটি নৌকায় সুতো বেঁধে পানিতে ভাসিয়ে খেলা করছে চার শিশু।
কেউ আবার স্কুল ছুটি শেষে ধানখেত ধরে ফিরছে বাড়ি। তখন চরের বুকে তিন ছাগল ছানাসহ বাড়ির পথে এক গৃহিণী,সঙ্গে তার দূরন্তপনা শিশু।
প্রতিদিনের জীবনগল্পের সাথে মিলে যাওয়া এমন হরেকরকম ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ফটোসাংবাদিক, ডকুমেন্টরি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিরোজ চৌধুরীর ১৩তম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচ দিনের এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘মা ও শিশু।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।
প্রদর্শনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আশিক ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র ফটোগ্রাফার এস এম গোর্কি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রংপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কাজী মো. জুননুন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন, রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, জেলা ও বিভাগীয় ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন প্রমুখ।
উদ্বোধনের পর থেকেই ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর প্যাভিলিয়ন ঘুরতে দেখা যায়। মা ও শিশু কেন্দ্রিক আলোকচিত্রে কেউ কেউ নিজের ফেলা আসা দিনগুলো দেখতে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। দর্শনার্থীরা বলছেন, ফটোসাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরীর ফ্রেমবন্দি প্রতিটি ছবিই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলছে।
প্রদর্শনীতে ঘুরতে আসা সিদ্দিকুর রহমান নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বলেন, বাইসাইকেলের টায়ার নিয়ে খেলার ছবিটা দেখে আমার শৈশবের একটা নস্টালজিয়ার ঢেউ আমাকে বয়ে গেল। কলেজের দিনগুলোতে নস্টালজিয়ায় ভরা ছিল। বেশকিছু ছবিতে আজ নিজের ফেলে আসা প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।
আরেক দর্শনার্থী জাবেদ ইবনে আনাম স্বপ্নীল তিনিও বেশ আনন্দিত এই প্রদর্শনীতে থাকা ছবিগুলো দেখে। আনন্দে উদ্বেলিত এই ব্যক্তি বলেন, এখনকার শিশু-কিশোরদের কাছে এসব ছবি অনেক অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের শৈশব-কৈশোরের সঙ্গে মিলে যাওয়া ছবিগুলো যেন আবার সেইদিনে ফিরিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি ছবি ভালো লাগার মতো এবং পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে জীবনের বার্তা বহন করছে।
এ প্রদর্শনী প্রসঙ্গে ফটোসাংবাদিক, ডকুমেন্টরি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিরোজ চৌধুরী জানালেন, এটি তার ১৩তম আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রায় এক যুগে মা ও শিশুর জীবনগল্পময় ১২৬টি ফ্রেমবন্দি বিভিন্ন রকম ছবি প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। প্রতিটি ছবি একটি করে বার্তা দিচ্ছে, কারণ ছবি কথা বলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ এই আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও রমজানের কারণে হয়নি।
প্রদর্শনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আশিক ইকবাল বলেন, পাঁচদিনের এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী শেষ হবে ২১ এপ্রিল। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। বিনামূল্যে প্রদর্শনীর প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিনিময় শুভেচ্ছা হিসেবে কেউ চাইলে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট কিনতে পারবেন। সমাপণী দিনে লটারির মাধ্যমে একজনকে দর্শনার্থীকে পুরস্কৃত করা হবে।