ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ার দখলে টিটো-মোশারুলের লড়াই, কার পক্ষ নেবে আ’লীগ ।
মো: মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভোট ক’দিন পরেই। শেষ মুহুর্তে প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগের পাশাপাশি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এলাকার উন্নয়ন সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। তবে ভোটের মাঠে বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য দল না থাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৯ প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
একই দলের চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো (আনারস), সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম সরকার (মোরটসাইকেল), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রওশনুল হক তুষার (ঘোড়া) ও সাবেক ছাত্রনেতা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল হাসান খোকন কাপ-পিরিচ প্রতীকে লড়ছেন। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটের মাঠে প্রচার ও সভা সমাবেশে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত করছেন নির্বাচনী মাঠ। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা । প্রার্থীরা মাঠে গণসংযোগের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। নিজ দলের প্রার্থীদের নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন। আবার অনেকেই নির্বাচনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তা নিয়ে পড়েন দোটানায়। কারণ এ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে ভুল করলে পরে রাজনীতিতে মাশুল দিতে হবে। আবার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আপাতত নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। ঘোড়া প্রতীকের রওশনুল হক তুষার ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের কামরুল হাসান খোকনের প্রচার-প্রচারণা সেভাবে পরিলক্ষিত না হলেও আনারস ও মোটরসাইকেলের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। মোটরসাইকেল প্রতীকে এর পক্ষে প্রচার ও সভা সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো, সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা ও একাংশ ইউপি চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরা। আর আনারস প্রতীকে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর সহ সহযোগী সংগঠনের একাংশ নেতাকর্মীদের।
আর ঠাকুরগাঁও – ১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এর একটিই বার্তা আগামী ২১ মে নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের মোশারুল ইসলামকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাই বলে এক নির্বাচনী সভায় ভোটারদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছেন রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গনেশ চন্দ্র সেন।
অপদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) সদর উপজেলা যুব লীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ (টিবওয়েল), সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা (উড়োজাহাজ), রুহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও (মহিলা) জেলা মহিলা লীগের বন-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক (ফুটবল) ও যুবমহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাসহুরা বেগম কলস প্রতীকে লড়ছেন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৪ জনের মধ্যে ২ জনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবে ১জনের পক্ষে গেলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হবেন। এমন অবস্থায় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। ২ জনই তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। আর যুবলীগের নেতারা বলেন, আমরা থানা ও ইউনিয়নের রাজনীতি করি। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ায় তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিলে ভবিষ্যতে পদ না পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এক্ষেত্রে নেতা কর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। যা সংঘাতে রূপ নিচ্ছে, এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেও শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এতে কোনো বিভেদ দেখছি না। তবে নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে অনুরোধ করেন তিনি। ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২য় ধাপে সদর উপজেলায় আগামী ২১মে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। একটি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ ও হিজরা ৪ জন। ১৮৫টি ভোট কেন্দ্র ও ১৪৫৩ টি বুথ রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা রিটার্রনিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: সোলেমান আলী জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২য় ধাপে আগামী ২১ মে সদর উপজেলায় ব্যালট পেপারের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানান তিনি।