মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করলেন মিরপুর ল'কলেজের উপাধ্যক্ষ
শোয়েব হোসেন (ঢাকা) --
রাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন পেশায় সকলে আসেন বলেই দেশ ও জাতীর ধারণা।অথচ, যে প্রতিষ্ঠানে আইন শেখানো হচ্ছে, সেখানেই আবার হচ্ছে বেআইনি কাজ কারবার!এমনই একটি আপত্তিকর,পৈশাচিক, ভয়াবহ,উদ্ভট, অসামাজিক ও চরম মানবাধিকার লংঘন জনিত ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মিরপুর ল'কলেজে! গত ৩০শে মে হাইকোর্টের একটি আদেশের কপি নিয়েও নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারলেন না মিরপুর ল'কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সুস্থ-সুন্দর জাতি গড়ার প্রত্যাশায় এবং দেশ ও দশের প্রতি স্মরণীয় অবদান রাখার লক্ষ্যে হাইকোর্টের একজন সম্মানিত আইনজীবী হওয়া সত্বেও বিনা বেতনে ১৯৯৩ ইং সনে প্রতিষ্ঠিত মিরপুর ল'কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্বাক্ষর রাখেন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে মিরপুর ল' কলেজের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন তিনি সততা এবং নিষ্ঠার যোগ্যতা স্বরূপ। হঠাৎ রহস্যময় ভাবে বিগত ০৯/০৫/২০২৪ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি চিঠি প্রেরণ করেন তার অব্যাহতির প্রসঙ্গে। চিঠিতে উল্লেখ থাকে ৬১ বছর হওয়ায় আপনি আর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
তারপর গত ১৫/০৫/২০২৪ তারিখে উপাধ্যক্ষ খন্দকার মোদারেস এলাহী তিরুর নেতৃত্বে শিক্ষক সোহেল মল্লিক, পাল বৃত্তাংশ নন্দন, খন্দকার ফারহান এলাহি ও কলেজের কর্মচারী বাদশা মোল্লা, তারেক রহমান, জসীমউদ্দীন, জামাল আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদের বাসায় এসে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে কলেজের কাগজপত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ও বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এই আদেশের আইনে বিভিন্ন ফাঁক রয়েছে।আমি মহামান্য হাইকোর্টে আবেদন করবো। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।যদি মহামান্য হাইকোর্ট আমাকে অব্যাহতি দেন তাহলে আমি চলে যাব।" তখন অমনি উপাধ্যক্ষ সহ তার সাথে থাকা শিক্ষক ও কর্মচারীরা বাসার মধ্যেই সন্ত্রাসী দের মতো তুমুল হট্টগোল করে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদকে অপমান অপদস্থ করে হুমকি দিয়ে যান যে,"আপনাকে কেউ এই চেয়ারে বসাতে পারবেনা, আমাদের পক্ষে স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী নেতা রয়েছে!"
পরবর্তীতে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ফলে ২০/০৫/২০২৪ইং তারিখে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আদেশকে স্থগিত করে রায়ে উল্লেখ করেন, "যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের আইন কে সংশোধন করে ৬৭ বছরে উন্নিত করেছেন সেজন্য অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে ৬৭ বছর পর্যন্ত মিরপুর ল' কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তার দায়িত্ব পালনে আর কোন আইনগত বাঁধা থাকবে না"।
বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০/০৫/২০২৪ তারিখে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন এবং ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের কপি তার হাতে এসেছে এবং তিনি তার দায়িত্বে বসবেন।তবে তিনি আশঙ্কা করছেন, কলেজে ঢোকা মাত্র তার জীবন হুমকির মুখে বা যেকোনো ধরনের আক্রমণ তার উপরে হতে পারে। তখন পল্লবী থানার পক্ষ থেকে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় এবং তার নিরাপত্তার জন্য এসআই তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলের সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী নিয়ে ভোরের বাংলা নিউজ এর সম্পাদক শেখ ফয়সাল আহমেদ সহ অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ ও তার সহধর্মিনী নাজমুন নাহার এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম কলেজ গেইটে উপস্থিত হলে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয় তালা খুলে দেওয়ার জন্য কিন্তু কেউই তালা খুলতে নারাজ। যদিও প্রশাসন, মানবাধিকার ও মিডিয়াকর্মীদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয় আমরা এসেছি একটি সমঝোতার মাধ্যমে। যেহেতু, উনি মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের কপি নিয়ে এসেছেন তাই আমরা বসে এ বিষয়টা সমাধান করবো।যেহেতু রায়ের মাধ্যমে তাকে তার দায়িত্বে পূর্ণ বহাল করা হয়েছে আপনারা গেট খুলে দিন।আপনারা কোন ভাবে আইন অমান্য করতে পারেন না এবং মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা দণ্ডনীয় অপরাধ।কিন্তু, কুচক্রী উপাধ্যাক্ষের নির্দেশে কোন অবস্থাতেই তালা খোলা হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও ভুল বোঝানো হয় এবং অনেক ছাত্র ক্লাস করার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষন।বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী জানান, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে, আমরা যতটুকু জানি আলাউদ্দিন আহমেদই আমাদের অধ্যক্ষ।গেইট না খোলায় আমরা ক্লাসও করতে পারছি না।
সেদিন কোন অবস্থাতেই উপাধ্যাক্ষ কোন কথায় কর্ণপাত করেননি এবং তালাও খুলেননি।তবে উক্ত সময়ে নানান অজুহাতে উপস্থিত হওয়া বিভিন্ন ব্যাক্তির সম্পূর্ণ ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যম কর্মীরা সংগ্রহ করেন।একপর্যায়ে অদৃশ্য অপশক্তির ঈশারায় বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও বহিরাগত বিভিন্ন লোকজন আক্রমনাত্মক উপস্থিত হয়ে হট্টগোল শুরু করলে বাধ্য হয়ে প্রশাসন, মানবাধিকার ও মিডিয়াকর্মীদের পরামর্শে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি এবং এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই সময়ে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পল্লবী থানার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবির আহমেদ সহ আরও কিছু নেতা। তিনি সব শুনে বলেন এখানের এমন ঘটনা আমি জানতাম না।আমি শুনেছি নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়েছে। তাই আমাকে চায়ের দাওয়াত করা হয়েছে।আমি কোন ভাবেই জানিনা যে এইখানে একটি ঝামেলা চলছে বা মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের কপি নিয়ে আলাউদ্দিন আহমেদ সাহেব তার দায়িত্ব বুঝে নিতে এসেছেন!আবির আরো বলেন, আমি যদি এই বিষয়টা জানতাম তাহলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না।আমরা ছাত্রলীগ আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল এবং আমরা ছাত্রলীগ দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী কোন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত না এবং কখনোই বেআইনি কোন কাজকে সমর্থন করি না।উল্লেখ থাকে যে, সুন্দর বুলি শুনিয়ে নেতারা বিদায় নিলেও আজও উক্ত রায়ের পক্ষে ভক্তিশ্রদ্ধার প্রমাণ স্বরূপ সহযোগিতা মুলক কোন বক্তব্য, আচরণ বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের!নেতাদের এমন ঘটনা সন্দেহ জনক বটেই!
উপস্থিত মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মীদের পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপূর্ব হোসেন বলেন, এই বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মিরপুর ল'কলেজ গভর্নিং বডির বিষয়।তারা এই বিষয়টি সমাধান করবেন তবে কেউ যদি কোন ধরনের হুমকি মনে করে তাকে সর্বাত্মক আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি খুব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে দাঁড় করিয়েছি।মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।ভাবতে অবাক লাগে আইন অঙ্গনে আমার অনেক ছাত্র আজকে স্বনামধন্য এডভোকেট ও বিচারপতি। আমি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য।তাছাড়াও আমি হাইকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী হওয়ার পরও আমাকে এই ধরনের অপমান হতে হবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনদিন কল্পনা করিনি। এই অপকর্মের সাথে যারা জড়িত এবং যারা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি গণমাধ্যমের কাছে সমস্ত সত্য তুলে ধরার অনুরোধ করছি। কলেজের উপাধাক্ষের রোষানলে গঠিত কুচক্রী বাহিনী ও বহিরাগত যারা এই কাজে ইন্ধন যোগাচ্ছে তাদের কঠোর শাস্তি দাবী করছি।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন সংশোধন করে ৬৭ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা বলেছেন।সেই সংশোধন দেখেই মহামান্য হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন।এভাবে মহামান্য হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষা করা চরমভাবে আদালত অবমাননা যা একটি আইনি শিক্ষাঙ্গনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। ইতিমধ্যেই আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি প্রেরণ করেছি।
উপস্থিত গণমাধ্যমকে হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান কোন ব্যক্তি কোন ভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না।এটি সরাসরি আদালত অবমাননা!যারা এই কাজগুলো করেছে বা করছে তারা বিচার বিভাগকে ও দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং অচিরেই এই আইন অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে আশা করি মহামান্য হাইকোর্ট কঠোর আদেশ দিবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, উপাধ্যক্ষের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষার্থীরা খুবই দু:খিত,লজ্জিত ও হতাশ।অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন স্যার একজন সৎ ও সাদামাটা মানুষ।এই কলেজ থেকে বহু শিক্ষার্থীকে তিনি আইন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।ওনার মত একজন মানুষের সঙ্গে যদি এই ধরনের আচরণ হয় তাহলে এই শিক্ষাঙ্গন থেকে আমরা কি শিখবো!আমরা সকলেই চাই অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন স্যার তার দায়িত্বে পুনরায় আসুক।যেহেতু, মহামান্য হাইকোর্ট ওনার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমাদের মনে হয় কোন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী এটার বিরুদ্ধে কথা বলবে না। হয়তোবা যারাই কথা বলছে তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে!
এই খবর লেখার আগ মুহুর্তে জানা গেছে, উল্লেখিত উপাধ্যক্ষ কুচক্রী বাহিনী ও স্থানীয় দাপুটে অসাধু কিছু নেতাদের সম্মিলিত গোপন বৈঠক ও ষড়যন্ত্র চলমান আছে।পুরো এলাকা জুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সময় যতই গড়াচ্ছে পরিবেশ ও শৃংখলা ততই যেন ঘোলাটে হতে চলেছে।গোপন সুত্রে বেশ কিছু ব্যাক্তি উপাধ্যক্ষকে লম্পট প্রকৃতির ব্যাক্তি বলে মতামত প্রকাশ করেছেন।সচেতন এলাকাবাসী আদালত অমান্যকারী সকল ব্যাক্তির সর্বোচ্চ ও কঠোর শাস্তির জোড়ালো দাবি জানান।
এই ব্যাপারে উপাধ্যক্ষ মোদারেস এলাহী তিরুর মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ করেননি।সর্ব সাধারনের ধারণা,এই উপাধ্যক্ষই যতো অপকর্ম ও অনিষ্টের মুল!বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকল প্রভাবশালী ও সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।