সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
সৈয়দপুরে তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর মানববন্ধন গাজীপুরের মৌচাকে ৭২ ঘন্টায় “শিহান” হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতার নুরুল হিকমাহ মাদরাসায় বিশিষ্টজনদের সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সৈয়দপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করে জামায়াত সৈয়দপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান মহান আল্লাহ মদ ও মদের অর্জিত মূল্য হারাম করেছেন সোস এর উদ্যােগে বর্ণাঢ্য  র‍্যালি ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত পীরগঞ্জে পূবালী ব্যাংকের ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ)’র পবিত্র খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা ও মাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩ বছর বয়স থেকে ঢাকায় গৃহকর্মী পরিচালিকার কাজে বন্দি ছিলেন রেখা!

প্রতিবেদক এর নাম / ৪৬ বার পড়া হয়েছে
বর্তমান সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩ বছর বয়স থেকে ঢাকায় গৃহকর্মী পরিচালিকার কাজে বন্দি ছিলেন রেখা!

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,রাজধানীর ঢাকায় দীর্ঘ ১৩ বছর বন্দিদশায় আবদ্ধ থেকে নির্যাতন সহ্য করে অবশেষে নিজ বাড়িতে পালিয়ে এসেছেন গৃহকর্মী রেখা আক্তার। বুধবার (২৬ জুন) মধ্যরাতে নিজ বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শীবগঞ্জ বাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি ফিরে আসেন। আলাপকালে রেখা জানান, তাকে ১৩ বছর বয়সে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহসিন আলী ঢাকার ভাড়া বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে তিনি ১ বছর কাজ করেন। এ সময় প্রায়ই মহসিনের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী রুনা আক্তার ও তার আত্মীয় লোটাস তাকে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। বাসায় আসতে চাইলেও আসতে দিতেন না। নির্যাতন সইতে না পেরে কোন এক সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। এসময় কোনো এক নারীর কাছে কাজের সন্ধান চাইলে তিনি একটি বাড়িতে নিয়ে যান এবং সেখানে কাজ শুরু করেন। এ বাড়িতে এসেই বন্দি জীবনে আটকে পড়েন রেখা। দীর্ঘ ১৩ বছর নির্যাতন সহ্য করে বন্দি জীবন কাটাতে হয় তাকে। কাজে যোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। বাড়ির কথা মুখে নিলেই ঘরের আসবাবপত্র, লোহার রড, কাঠ দিয়ে শুরু হতো মারধর। যে সব আঘাতের চিহ্ন তার শরীরে। রেখা বলেন, আমাকে বন্দি করে রাখা হতো। বাসার ময়লা ফেলতে গেলেও সে বাড়ির লোকজন আমাকে পাহাড়া দিতো যাতে আমি পালাতে না পারি। ভাবলেই বুক কাঁপে আমার। তারা আমাকে আমার বাড়িতে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে দেয়নি। আমাকে তালা দিয়ে রাখা হতো। ঢাকার কোন এলাকায় ছিলেন জানতে চাইলে রেখা বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। শুধু জানি ঢাকা যাওয়ার প্রথম দিকে ভূতের গলি নামে একটি জায়গার আশেপাশে ছিলাম। পরবর্তীতে যে বাসায় কাজ নিয়েছিলাম তার কোনকিছুই আমি জানিনা। ঐ বাড়িতে ঢুকার পর আর বের হওয়ার বা কোনো মানুষের সাথে মেলামেশারও সুযোগ দেয়নি তারা। সারাক্ষণ ঘরবন্দি করে রাখতো আর বাড়ির কথা মুখে নিলেই মারধর করতো।এ ১৩ বছরে আমাকে কাজের কোনো মজুরি দেয়নি তারা। এটুকু জানি সে বাড়ির মালিকের নাম ছিলো মাহাবুব হোসেন ও তার স্ত্রীর নাম ঝর্ণা আক্তার। কিভাবে পালিয়ে এলেন- জানতে চাইলে রেখা বলেন, সেদিন বাসার সুকেসের উপরে চাবি ছিলো। আমি সে চাবি দিয়ে বাড়ির সদর দরজা খুলে পালিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। এরপর এক বয়স্ক লোকের কাছে ঘটনা শুনিয়েছি। তিনি আমাকে ৬০০ টাকা সাহায্য তুলে দিয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। তারপর বাসের কন্ডাক্টর আমাকে ঠাকুরগাঁও পৌঁছে দেন।
বাড়ি ফিরে কেমন লাগছে জানতে চাওয়া মাত্রই নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেনি রেখা। কাঁদতে কাঁদতে রেখা বলেন, বাড়ি ফিরে জানতে পারলাম আমার বাবা ও চাচা আর পৃথিবীতে নেই। দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বাড়ি ফেরার মধ্যে আনন্দ কাজ করলেও বাবা হারানোর কষ্ট আমাকে তাড়া করছে। শত নির্যাতনের পরেও আমাকে যদি তারা বাড়িতে যোগাযোগ করার সুযোগ দিতো তাহলে অন্তত বাবা মারা যাওয়ার খবরটা জানতে পারতাম। রেখার পরিবারে মা সহ আরও দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। এদের মধ্যে রেখা সবার বড়।
ছোট ভাই লিটন আলী ও ছোট বোন বলেন, আমরা শুধু জানতাম আমাদের এক বড় বোন আছে। যিনি ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে আর ফিরেননি। সে বাড়ি ফিরে এসে আমরা তাকে প্রথম দেখেছি। বোনের ফিরে আসাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। রেখা ফিরে আসাতে খুশী প্রতিবেশিরাও। তার ফিরে আসার খবর শুনে বাড়িতে দলে দলে তাকে দেখতে এখন পর্যন্ত ভিড় করছেন স্থানীয়রা। এদিকে রেখার মা আনোয়ারা বেগম মেয়ের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন ও গৃহে বন্দি রেখে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের দায়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। বলেন, যারা আমার মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ এক যুগ গৃহবন্দি রেখে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। যেন আর কোনো মায়ের সন্তানের সাথে এমন না করা হয়। এ বিষয়ে রেখাকে প্রথমে ঢাকা নিয়ে যাওয়া মহসিন আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে হলে তিনি বলেন, ২০১১ সালে আমার স্ত্রী গর্ভবতী থাকার কারণে ঘরের কাজের সহযোগিতার জন্য রেখাকে গ্রাম থেকে এনেছিলাম। সে কাউকে কিছু না বলে বছর খানেক পর বাড়ি থেকে চলে যায়। এ সময় তিনি রেখার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগও তোলেন এবং কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় রেখার পরিবার আমাদের নামে অপহরণ মামলাও করেছিলো। আদালত আমাদের খালাস দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তৎকালীন চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তার পরিবারের সাথে আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমাধানও করেছি।
তবে রেখা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন, শুধুমাত্র মহসীন আলী পরিবারের নির্যাতনের কারণে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়াত হোসেন বলেন, পরিবারটি যদি আইনগত সহায়তা চায় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা করা হবে এবং এর জন্য কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর