সংসদ সদস্য ওয়াহেদ'র ডিও বানিজ্যে প্রশাসন সহ বিব্রত ব্যবসায়ী মহল
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল উপজেলা ভালুকা। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ বিজয়ী হওয়ার পর উপজেলা সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা, স্কুল, কলেজ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নিয়ন্ত্রণের জন্য একের পর এক ডিও লেটার বা আধা সরকারি সুপারিশপত্র দেওয়ায় বিব্রত দেশি বিদেশি ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসন। সচেতন মহল বলছে, একজন সংসদ সদস্য সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সকল দপ্তরের নিয়মিত কাজে হস্থক্ষেপ করে ডিও লেটার দেওয়া খুবই দুঃখজনক। এতে নিয়ম মাফিক কাজ করতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও শিল্প মালিকরা।
সম্প্রতি এমপির চিহ্নিত বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকান্ডে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শান্তির নগরী ভালুকা। উপজেলার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এমপি ওয়াহেদ মনোনিত ব্যাক্তিরা। আরও বেশ কিছু শিল্প কারখানার ব্যাবসা দখলে নিতে ওয়েস্টিজ ও জুট আটকে রেখেছে এমপির ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নানা রকম হুমকী ধমকি দিচ্ছেন। শিল্প কারখানা থেকে কোন প্রকার কাভার্ড ভ্যান বের হলে তা তারা চেক করে বের করে। গেটে দেশিও অস্ত্রসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের পাহারায় বসিয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টিজে বৈদ্যিতিক শর্টসার্কিটে যে কোন সময় অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে শিল্প মালিকরা আতঙ্কে দিন পার করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অগ্নিকান্ডের মতো দূর্ঘটনা ঘটলে এ দায়ভার বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াহেদকেই নিতে হবে।
কিছুদিন আগে মোনতাজিম গ্রুপের ওয়েস্টিজ ভর্তি দুটি গাড়ি ছিনতাই করে নেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আফসানুল ইসলাম খান রাফী। পরে পুলিশের অভিযানে উপজেলা মল্লিকবাড়ি বায়াবর থেকে লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
একের পর এক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়ে দখল নেওয়া শুরু হয় শিল্প কারখানার ব্যাবসা। কনজুমার নিটেক্স লিঃ এর ব্যাবসা করা সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন ধনু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুনের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলার ধামশুর গ্রামের সিমকো নামের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যাবসা করা যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মাহির ব্যাবসা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে দখল নেয় এমপি মনোনিত খলিফা ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আর্টি কম্পোজিটে ব্যাবসা করা স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওামীলীগ নেতা হুমাউন কবিরের ব্যাবসা ও ইনডেক্স ফিড মিলের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ছানা। উপজেলার মাস্টারবাড়ি নারিশ পোল্ট্রি ফিড মিল ও কটন গ্রুপের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি ওয়াহেদ মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলার ধামশুরের আওয়ামীলীগ নেতার কাছ থেকে অটোক্রফট বিষ ফ্যাক্টরির ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এজাদুল হক পারুল, উপজেলার মেহেরাবড়ির এপারেলস ডায়িংয়ের ব্যাবসা দখল করে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খোকন হোসেন ঢালী, উপজেলা হাজির বাজারের তাইপে বাংলা ফেব্রিকসের ব্যাবসা দখল করে নেয় এমপি ওয়াহেদ মনোনিত খলিফা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার আহাম্মেদ সুজন।
আরও বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টিজ মালামাল বের করতে দিচ্ছেনা এমপি ওয়াহেদের নিযুক্ত খলিফারা। ফলে এসব শিল্প কারখানার জুটে বৈদ্যিতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন শিল্প মালিকরা।
উপজেলার সকল প্রকার প্রশাসনিক কাজে হস্থক্ষেপ করছেন এমপি ওয়াহেদ। এখতিয়ার বহির্ভূত দাপ্তরিক কাজে ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ডিও লেটার দিচ্ছেন এই সংসদ সদস্য। ডিও লেটার দিয়েই খান্ত হচ্ছেন না তিনি। ডিও লেটারের উপর আবার ডিও লেটার দিচ্ছেন। এতে বিব্রত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা।
কিছুদিন আগে হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমুরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি করার জন্য জাকির হোসেন শিবলী ও আশেক উল্লাহ চৌধুরী এই দুইজনকেই ডিও লেটার দিয়েছিলেন সাংসদ ওয়াহেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সহায়ক সেক্টর হচ্ছে পোশাক শিল্প। বর্তমান সময়ে দেশে ডলার সংকট, গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ সকটের মধ্য দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়াই আমাদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এমন সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজনের অন্যায় ভাবে নানা রকম হয়রানী আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা শিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বিষয়ে আমারা সাংগঠনিক ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবো। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবো। আমরা সরকারকে টেক্স দিয়ে ব্যাবসা করি। আমাদের ব্যাবসায়ীক নিরাপত্তা ও পরিবেশ সরকারকেই দিতে হবে। এমপির লোকজনের কারণে যদি কোন কারখানার আটকে থাকা জুটে কোন রকম দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায় সংসদ সদস্যকেই নিতে হবে।
সংসদ সদস্য মোহাস্মদ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুট ব্যাবসাগুলো সাধারণত স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজনই করে থাকে। তাই আমার আসনের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদেরকে আমি দায়িত্ব দিয়েছি। ব্যবাসা থেকে আয়ের টাকা সকল পর্যায়ের নেতা কর্মী ও দুস্থ- অসহায় মানুষের পিছনে ব্যায় করা হবে। যত্রতত্র ডিও লেটার দেওয়া ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।