নীলফামারীতে জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখার সদস্য (রুকন) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ৩ টায় জেলা জামায়াত অফিস (আল হেলান একাডেমি) চত্বরে এই আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন পর উম্মুক্তভাবে এমন আয়োজনে সতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহণে আনন্দ ও উৎসব মুখর পরিবেশে সম্মেলন সফল হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের লালমনিরহাট জেলার সাবেক আমীর, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের বর্তমান ইউনিট সদস্য এ্যাড. মো. আব্দুল বাতেন।
জেলা আমীর আব্দুর রশীদ এর সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনে জেলার ৮ টি সাংগঠনিক উপজেলার সাড়ে ৮ শতাধিক রুকনসহ আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিক, সূধীবৃন্দ ও ইসলামি ছাত্র শিবির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২০২৫-২০২৬ ইং সেশনের জন্য জেলা আমীর নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন জন রুকন।
বক্তব্য রাখেন, নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) সংসদীয় আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী রংপুর মহানগরীর সহ সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নীলফামারী-২ (সদর) আসনের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. মাওলানা খায়রুল আলম, ফোরাম অব ডিপ্লোমা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিয়ার গিয়াস উদ্দিন, নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের প্রার্থী সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম।
প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অন্যতম ইসলামী আন্দোলন। এই আন্দোলনকে বাংলার বুকে কেউ কোনভাবেই নির্মূল করতে পারবেনা। ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নির্মম জুলুম করেও আমাদেরকে দমানো সম্ভব হয়নি। সংগঠনের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে ফাঁসি দিলেও জামায়াত শেষ হয়নি।
বরং যত বেশি নির্যাতন করা হয়েছে জামায়াত ও শিবির তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৭ বছর আগে নীলফামারী জেলায় রুকন ছিল ৪শ' জন আর এখন সাড়ে ৮শ' জন। কর্মীর ক্ষেত্রেও সমভাবে বৃদ্ধি হয়েছে।
আমাদের হাতিয়ার হলো আল কুরআন আর রাসূল (সা.) এর দেখানো নীতিমালা। এই উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূল কারণ হলো আমরা আল্লাহর রজ্জু কে আকরে ধরে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছি।
আল্লাহ জালিমকে ভালোবাসেন না। তাই স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়েছে অভাবনীয়ভাবে। আর জামায়াতের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ এখন জামায়াতকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চায়। এজন্য আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। তাই নৈতিক মানসহ ইসলামি জ্ঞান অর্জনে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
আমরা যদি আল্লাহর দ্বীন কায়েমে সচেষ্ট হই তাহলে আল্লাহ বিজয়ও দিবেন। নীলফামারীর ৪ টি আসনেই প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সকলে মিলে কাজ করলে এক্ষেত্রে সফল হবো আমরা। এই সফলতা অর্জনের জন্য সর্বস্তরের জনশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ় মনোবলে আরও বেশী সাংগঠনিক ও সামাজিক কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক বেলাল আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলার মানুষ কখনো ক্ষমা করবেনা। বিশ্বের যেখানেই থাকুক তাকে দেশে এনে বিচার করা হবে। গণহত্যাকারী ও তাদের দোসর দালালরা কেউই রক্ষা পাবেনা। আর শুধু নেতার পরিবর্তন নয়, নীতির পরিবর্তন করতে হবে। তাই সংষ্কার একান্ত প্রয়োজন। নয়তো জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান যথার্থভাবে সফল হবেনা। আর এবার ব্যর্থ হলে এদেশে আর কখনই প্রকৃত সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবেনা।
তিনি বলেন, জামায়াতের মত নির্যাতিত আর কোন দল হয়নি। কিন্তু দ্বীনি দায়িত্ব পালনে পিছপা না হওয়ায় আজও জামায়াত টিকে আছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে আর কখনো কেউ জামায়াতকে ধ্বংস করতে পারবেনা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতের সম্ভাবনা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেভাবেই আমাদেরকে জ্ঞানে ও চরিত্রে আরও উন্নত হতে হবে।
আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ছাড়া বৈষম্যহীম সমাজ বা দেশ বিনির্মান সম্ভব নয়। এটা মানুষ বুঝতে পেরেছে। তাই তারা প্রকাশ্যেই জামায়াতকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে বসাতে চায়। এই জন আকাঙ্খা পূরণে আমাদের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। এই আহ্বান জানিয়ে তিনি আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা সভাপতি আব্দুর রশীদ বলেন, রুকন সম্মেলনে ভোট দিয়ে জেলা দায়িত্বশীল (আমীর) নির্বাচন করা হয়। এই আমানত যথাযথভাবে প্রদানের মাধ্যমে আপনারা আন্দোলনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। আল্লাহর দরবারে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দ্বীন কায়েমের জন্য সাহায্য কামনা করেন তিনি। সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি সমাপ্তি ঘোষণা করেন।