সৈয়দপুরে পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত
তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি)
ঐতিহাসিক পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিশাল সমাবেশ ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার স্থানীয় তামান্না মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী ও জনসাধারণ অংশ নেন। সংগঠনটির সৈয়দপুর শহর শাখার আমীর মো. শরফুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য ও নীলফামারী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. খায়রুল আনাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা জামায়াতের সুরা সদস্য ও সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। আরো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী শহর শাখার সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী, সাবেক উপজেলা আমীর মাওলানা লুৎফর রহমান, সাবেক উপজেলা আমীর শিক্ষাবিদ গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য বলেন জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি ও চাপড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারময়ান জাহাঙ্গীর আলম লালন, সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম, পেশাজীবি বিভাগের উপজেলা সভাপতি খায়রাত হোসেন বসুনিয়া, জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও সৈয়দপুর শহর জামায়াতের অফিস সম্পাদক আবু বকর, তারবিয়াত সেক্রেটারি খায়রুল বাশার, উপজেলা মানবসম্পদ বিভাগের রেজওয়ানুল হাসান, উপজেলা বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা সাজেদুর রহমান, উপজেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম, শহর শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল মোমেন, তালিমুল কুরআন বিভাগের মোখলেছুর রহমান, ওলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মুয়ীদ আলাল, সাবেক শহর সভাপতি মো. সাহাবাজ উদ্দিন সবুজ, শিবিরের নীলফামারী শহর শাখার অফিস সম্পাদক সেলিম উদ্দিন, ছাত্রশিবির সৈয়দপুর পৌর সাংগঠনিক থানা শাখার সভাপতি সাদিক আব্দুল্লাহ শিমুল, সোনাখুলী সাংগঠনিক থানা শাখা সভাপতি নাসিব আল হাসান নূর প্রমুখ।
প্রধান অতিথি ড. খায়রুল আনাম বলেন, ২০০৬ সালের রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের পথ ধরে আওয়ামী লীগ যে সন্ত্রাসী রাজনীতি শুরু করেছিল তা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন থেকে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকারসহ মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
ওইদিনের নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন এলাকা লগি-বৈঠাধারীদের সন্ত্রাসী তাণ্ডবে এক রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়। তাদের হামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গোটা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃত মানুষের লাশের ওপর নৃত্য করে বর্বরভাবে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে। যা সারা বিশ্বের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ওই ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা। ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের রক্ষা করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, এ পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের জনগণের দাবি হচ্ছে, অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শহর সেক্রেটারী মাওলানা ওয়াজেদ আলীর সঞ্চালনায় পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত করেন সাদেকুল ইসলাম। শেষে ২৮ অক্টোবর এর উপর বড় পর্দায় আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সমাবেশে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে সৈয়দপুর সমন্বিত সংসদ সৈসাসের শিল্পীরা।