প্রাণীকুলের প্রতি নুরনবী (দ.)’র দয়ার্দ্র ও মমতা”
মানবতার নবী, আমেনা নন্দন, মুহাম্মাদ মুস্তাফা ﷺ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে স্বয়ং স্রষ্টা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-“আর আমি তো (হে হাবীব!) আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। সূরা (আল আম্বিয়া,আয়াত নং ১০৭)। নুরনাবী ﷺ শুধু মানব, জ্বীন ও ফেরেশতা জাতির জন্য রহমত নন বরং প্রাণীকুলের জন্যেও রহমত। এ বিষয়টি বুঝতে হলে তাঁর মহা মূল্যবান বাণী (হাদিস) ও তাঁর নৈতিক এবং মানবিক শিক্ষা নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা প্রয়োজন। প্রাণীকুলের প্রতি তিনি নিজেও দয়ার্দ্র ও মমতাবান ছিলেন এবং তাঁর অনুসারী সমগ্র উম্মাহকেও দয়ালু হওয়ার তাগিদ করেছেন বারংবার। তিনি বলেছেন-
”যে (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হয় না।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১৩ হাদিসের মান: সহিহ)। এমনকি ইসলামের হালাল কৃত পশু ও কুরবানীর পশুর জবাই করা সময়ও দয়া প্রদর্শনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন-“যে
ব্যক্তি দয়াপরবশ হয়, তা যবেহ করার প্রাণীর প্রতি হলেও, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে দয়া করবেন।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩৮২, হাদিসের মান: হাসান)। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) প্রাণীকুলের প্রতি কেমন দয়ালু ছিলেন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে, হযরত আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ হতে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,”একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (ﷺ) সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজনে অন্যত্র গেলেন। আমরা দু’টি বাচ্চাসহ একটি পাখি দেখতে পেয়ে বাচ্চা দুটোকে ধরে নিলাম। মা পাখি টা সাথে সাথে আসলো এবং পাখা ঝাঁপটিয়ে বাচ্চার জন্য অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিরে এসে বললেনঃ কে এর বাচ্চা নিয়ে এসে একে অস্থিরতায় ফেলেছে? বাচ্চাগুলো এদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। তিনি আমাদের পুড়িয়ে দেয়া একটা পিঁপড়ার ঢিবি দেখতে পেয়ে বললেনঃ কে এগুলো পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা। তিনি বললেনঃ কোন মানুষকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়ার কারো অধিকার নেই।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৬৭৫, হাদিসের মান: সহিহ)। কোন বালাক/বালিকা যাতে খেলার ছলে কোন পশু/পাখিকে কষ্ট না দেয় সে দিকে তাকিদ করে নুরনবী মুহাম্মাদ মুস্তাফা (ﷺ) অভিসম্পাত সহ নিষেধ করেছেন, যেন কোন ব্যক্তি কোন প্রাণী কে নিশানা না বানায়।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৪৪১,হাদিসের মান: সহিহ)। এমন কি ছোট ছোট প্রাণী বা পোকা-মাকড় যেমন-পিপীলিকা, মৌমাছি, হুদহুদ পাখি ও সূরাদ পাখি ইত্যাদিকেও হত্যা করতে নিষেধ করেছেন । (আবু দাউদ হাদিস নং ৫২৬৭, হাদিসের মান: সহিহ)। প্রাণী অধিকার সরক্ষণে ক্ষেত্রে প্রাণীর মুখে আঘাত করা ও সেক দেয়াও নুরনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিষিদ্ধ করেছেন। ”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৪৪৩,হাদিসের মান: সহিহ)
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে প্রাণীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার ও তা মেনে চলার তৌফিক দিন। (আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন)
শেখ খুরশিদ আলম (মানিক) নূরী রিজভী
ডবল (কামিল), ডবল এম.এ