নাটোর-গুরুদাসপুরে সুদের টাকা আদায়ের জন্য কৃষককে তুলে নিয়ে শিকলবন্দি
স্টাফ রিপোর্টারঃ এম, মাসুদ রানা সুমন
নাটোরের গুরুদাসপুরে সুদের টাকা দিতে না পারায় আসাদ আলী (৫৫) নামে এক দিনমজুর কৃষককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শিকলবন্দি করে রাখে গুরুদাসপুর উপজেলার ৪ নং মশিন্দা ইউনিয়নের মশিন্দা বাহাদুরপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ।
২৩ ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং শনিবার সকালে উপজেলার ৪ নং মশিন্দা ইউনিয়নের মশিন্দা বাহাদূরপাড়া গ্রামের সুদে কারবারি আব্দুল আজিজ তার নিজ বসত বাড়ির বারান্দায় ৫৫ বছর বয়সী আসাদ আলী নামক এক হত দরিদ্র দিন মুজুর কৃষক কে শিকল দ্বারা বেধে তালা বদ্ধ করে রাখে।
ভুক্তভোগী কৃষক আসাদ সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার ইশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী শিকলবন্দি কৃষক আসাদ আলী বলেন, ‘তিন বছর আগে আমি ৮০ হাজার টাকা জমি লিজ ভিত্তিতে আব্দুল আজিজের নিকট হতে সুদে নিয়েছিলাম।
গত দুই বছরে ২০ হাজার টাকা সুদ এবং আসল ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। বাকি ৫০ হাজার টাকা এ বছর দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি দুর্ঘটনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই।
ফলে অভাবগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় আব্দুল আজিজের পাওনা বাকি টাকাগুলো দিতে বিলম্ব হওয়ায়। শনিবার সকালে আব্দুল আজিজ ও তার বাবা আফজাল হোসেন সহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে আমার বাড়ি হতে আমি শুয়ে থাকা অবস্থায় আনুমানিক সকাল ৮টার সময় আমাকে হাত পা বেঁধে তারা তুলে নিয়ে যায়।
এরপর আব্দুল আজিজের বসত বাড়ির বারান্দায় আমার মাজায় শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। টাকা না দিতে পারলে আমাকে ছাড়বে না বলে হুমকি দেয়।
আমার এখন এই মুহূর্তে টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই বললে তারা বলে টাকা না দিতে পারলে হাত পা ভেঙে ফেলবে।’
সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অনেকদিন পাওনা টাকা ফেরত চেয়েও পাইনি। তাই বাড়ি থেকে তুলে এনে শিকলবন্দি করা হয়েছে, যেন সে পালিয়ে যেতে না পারে। টাকা পরিশোধ করলে শিকলমুক্ত করে ছেড়ে দেয়া হবে।’
স্থানীয় লোকজন পুলিশ কে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছিলে সুদে কারবারি আজিজ সহ তার পুরো পরিবার ও ভুক্তভোগী আসাদকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশেরর দীর্ঘ অভিযানে রাত আনুমানিক ৩টার ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে এবং আজিজ কে থানা হাজতে প্রেরন করেন।
খোজ নিয়ে জানাযায় যে আব্দুল আজিজের মত অত্র ইউনিয়নের প্রায় সব গুলো গ্রামে এমন অবৈধ মহাজনী সুদের কারবারিতে ভরে গেছে।
৪ নং মশিন্দা ইউনিয়নের অনেক মানুষ উচ্চ হারে সুদের টাকা নিয়ে ঠিক মত সুদ আসল পরিশোধ করতে না পেরে মহাজনের চাপে কেও কেও বসত বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
আবার কেও কেও সর্বস্ব বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করে নিস্ব হয়েছে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে সুদে কারবারিদের চাপে জীবন পর্যন্ত দিতে গিয়েছে। তেমনি ঘটনা ঘটেছে মশিন্দা শিকার পাড়া গ্রামের মরহুম ওসমান গণীর ছেলে শফিকুল ইসলামের বেলায়। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বিক্রি করা জমি সুদের কারবারির নামে রেজিষ্ট্রেশন করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এলাকার শিক্ষীত সচেতন মানুষের দাবী এলাকার জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনের উদ্যোগে সুদে কারবার বন্দ করা হোক।
নইলে এই সকল অবৈধ সুদ খোরদের চাপে নিরিহ মানুষ দের জন জীবন অতিষ্ঠ।।