মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার ৫ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঐ রাস্তাগুলোর মধ্যে ৮ কিলোমিটার রাস্তায় নতুন গাছ লাগালেও বাকি রাস্তাগুলোতে গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এরমধ্যেই দরপত্রের মাধ্যমে আবারও ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। তাপদহের এ দুঃসময়ে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ঠাকুরগাঁও জেলা বনবিভাগ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী আয়তনের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁও জেলা রয়েছে ২ ভাগের কম বনভূমি । এসব গাছপালা কেটে ফেলা হলে শূন্যের কোটায় পৌঁছাবে বনভূমি। সবকিছু জানার পরেও গেল মাসে ৮ ইউনিয়নে রাস্তায় থাকা অবশিষ্ট গাছ কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দুটো ইউনিয়নে শুরু হয়েছে গাছ কাটা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা শ্রমিকরা রাস্তার গাছ কাটছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৪ হাজার গাছ কাটবেন তারা।
এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা। বন বিভাগের আহবান করা দরপত্র অনুযায়ী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া থেকে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ি হতে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বাহার জিলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, সিন্দুরপিন্ডি থেকে খোঁচাবাড়ী হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা ও দলুয়া হয়ে পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেয়া হয়েছে কাটার জন্য। এসব গাছে পাখির বাসাও দেখা গেছে। মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায় মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ মাঠে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেন। এ তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে এখন রাস্তার দুপাশের বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটা হলে মরুভূমিতে পরিণত হবে এলাকাটি। তাই এলাকাবাসীর দাবি, প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে এই মুহূর্তে গাছগুলো না কেটে কিছুদিন পরে কাটলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো। পথচারী আব্দুল জব্বার, সালাম, রহমত সহ অনেকে জানান, পরিবেশটা ঠান্ডা হলে গাছগুলো কাটুক তাতে আপত্তি নাই। এখন গাছগুলো কাটলে প্রচন্ড রোদে মানুষসহ প্রাণিকূলের জন্য পরিবেশটা খারাপ হতে পারে। এলাকার শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গরমের কারণে আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুল ৭ কিলোমিটার দূরে। গাছগুলোর জন্য মাথার ওপর ছাতা না থাকলেও আরামে স্কুলে যাতায়াত করতাম আমরা। গাছগুলো কাটতে শুরু করেছে, স্কুল খুললে গরমে স্কুলে যেতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, আগে ঠান্ডা ও শীতল থাকত রাস্তাটি।’ জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও জেলায় দুপুরে তাপের প্রখরতা ছিল ৪০ ডিগ্রি। গরমের তীব্রতায় মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২টি স্থানে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। এ অবস্থায় গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার লোকজন। সনগাঁও গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আমানুল্লাহ বলেন, রাস্তার পাশের গাছগুলো এই মুহূর্তে যেমন মানুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি পশু-পাখিদের জন্যও প্রয়োজন। অনেক পাখি এখন গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহের সময়ে পাখিগুলোর জন্য হলেও কিছুদিন পরে গাছগুলো কাটা উচিত। পাড়িয়া ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘দরপত্র হয়েছে, গাছ কাটবে ঠিকাদার। এতে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি, গরমের দিনগুলো পার করে গাছ কাটা হোক।
এটা নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাবো আমরা।’ ঠাকুরগাঁও বনবিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মন্ডল বলেন, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি। তাপদাহ কমে গেলে দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদাররা কাটবেন।