মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাও জেলায় মসজিদ, মাদ্রাসা সহ পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও শামীম নামের এক প্রতারক। প্রতারক শামীমের বাড়ী ঠাকুরগাও
জেলার হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গীর লেহেডোবা গ্রামে। শামীম ছাড়াও এ চক্রের সাথে বালিয়াডাঙ্গী গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ বেলাল উদ্দিনের ছোটেভাই জমিরিয়া ইহয়াউল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি শরিফুল ইসলাম সহ তাঁর সংগে স্থানীয় কিছু লোক জড়িত বলে ভুক্তভোগি পরিবাগুলো জানান। ৯মাস ধরে শামীমসহ তাঁর প্রতারক চক্র কয়েকজন পলাতক রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইলও(০১৭১৭৩৩০২৫৫) বন্ধ রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও লিল্লাহবডিং,রুপগন্জ জামে মসজিদ,সর্বমঙ্গলা জামে মসজিদ,বিশ্রামপুর জামে মসজিদ সহ বিভিন্ন
মসজিদ,মাদরাসা ও গ্রামের সহজ সরল মানুষদের পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা জামানত নিয়ে পালিয়েছে চক্রটি।
বালিয়াডাঙ্গীচৌরাস্তার কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোক্তারুল ইসলাম জানান,চক্রের সদস্য শামীম হোসেন আমাদের কাছে এসে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসার ভবনটি চার তলা আধুনিক একটি ভবন করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন।আধুনিক
চারতলা ভবনের বরাদ্দ নিতে ১২ লক্ষ টাকা জামানত দিতে হবে এমন শর্তে আমরা রাজি হই।শর্ত মোতাবেক দুই দফায় ৬লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়।শামীম টাকা হাতে পাওয়ার পর মাদরাসার সেমি পাকা বিল্ডিংটি ভেংগে দিয়ে মাদরাসার বহুতল ভবনের ভিত্তি স্থাপন
করেন। এতে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচও করেন। বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসার কাজ শুরু হয়েছে। এটি দেখিয়ে এসময় এলাকার অনেক মসজিদ ও মাদরাসার বিল্ডিংসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার নামে কয়েক কোটি
টাকা হাতিয়ে নেন,এর পর তিনি(শামীম) পলাতক।
রুপগন্জ জামে মসজিদ এর সভাপতি আব্দুর রশিদ
জানান,আমাদের নিকট হরিপুরের শামীম সহ বালিয়াডাঙ্গীর জমিরিয়া ইহয়াউলুম মাদরাসার পরিচালক বাবার আলীর ছেলে মুফতি শরিফুল ইসলাম একজন ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল আমরা নয় লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিছু কাজ করে পালিয়েছে।প্রায় এক বছর ধরে মুসল্লিরা কস্ট করে টিনের চালায় নামাজ আদায় করেছে। সর্বমঙ্গলা ও বিশ্রামপুরে খবর নিয়ে জানা গেছে ঐ মসজিদগুলোরও একই রকম অবস্থা।কোন মসজিদে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
করেছে আবার কোন মসজিদের পিলার পর্যন্ত করেই পালিয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় মসজিদ এর পেশ মোহাম্মদ হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবু তাহের জানান,আমরা ছাত্র নিয়ে ভালোই ছিলাম। সেমি পাকা বিল্ডিংয়েই পাঠদানে তেমন অসুবিধা
হচ্ছিলো না। শামীম নামের লোকটি আমাদের অনেক অসুবিধা করেছে।সেমি পাকা বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে ভিত্তি স্থাপন করে ৯ মাস ধরে লাপাত্তা। এখন বাচ্চাদের নিয়ে যাযাবরের মতো মসজিদের উপরে আর নিচে উঠা নামা করে বেড়াচ্ছি।অনেক সময় বাচ্চারা
সিড়ি দিয়ে ওঠা নামা করতে গিয়ে পা পিছলে পরে আহতও হচ্ছে। ভানোরের ধনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রামে দু’একটা বাড়ী করে দিয়ে শত শত মানুষের
কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও শামীম। আমার জানামতে ঠাকুরগাওয়ের ৮শ ৬০ টি ঘর করে দেওয়ার জন্য প্রায় ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নিয়েছে।শামীম প্রায় আট থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিদেশী বরাদ্দে তিন রুম বিশিষ্ট ছাদের পাকা বাড়ী
তৈরী করে দিচ্ছিল এটা দেখে হুমরি খেয়ে পরে মানুষ।এতে বাড়ী প্রতি ১লক্ষ টাকা করে জামানত নেয় শামীম। গ্রামের মানুষ গরু,ছাগল, ঘটি-বাটি বিক্রি করে টাকা জমা করে শামীমের কাছে। অনেক টাকা জমা নেওয়ার পর এক রাতে ঢাকায় অফিসে কাজের কথা
বলে চলে যায়। সেই’ থেকে শামীমের দেখা আর কেউ পাইনি।কিছু টাকা সংগ্রহের সময় যেহেতু আমি ছিলাম সেহেতু ভুক্তভোগি পরিবারগুলো এখন আমাকে দৌঁড়ানির মধ্যে রেখেছে।সকাল হলেই
তাদের চিল্লানিতে ঘুম ভাংগে আমার।
ভানোরের আজিজুল হক জানান,আমার এক জোড়া সখের পোষা গরু ছিল।১০ মাস আগে ছাদের পাকা বাড়ীর আশায় গরু জোড়া বিক্রি করে টাকা জমা দিয়েছিলাম।এখন ঘরও নাই শামীম নামের
ঐ লোকও নাই। ধনির হাট গ্রামের কামরুল জানান,শিক্ষক সাইফুলের কথামতো
ধার দেনা করে পাকা ঘরের জন্য ১লক্ষ টাকা জমা করেছিলাম। ঘর না পেয়েই ৯মাস ধরে দেনার টাকা পরিশোধ করছি। ঘর না পেলে সাইফুল স্যারের কাছে টাকা আদায় করবো। এব্যাপরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফছানা কাওছার জানান, প্রতারণার বিষয়টি অবগত নই।এখনো কেউ
অভিযোগ করে নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।