সৈয়দপুরে কম মজুরির প্রতিবাদ করায় ছয় শ্রমিক চাকুরিচ্যুত
তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি)
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকার নির্ধারিত পারিশ্রমিকের চাইতে কম মজুরি দেওয়ায় প্রতিবাদ করায় স্থানীয় খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রের (এলএসডি) ছয় জন শ্রমিককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করার অভিযোগ ওঠেছে। ছাটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বৃহস্পতিবার (১১জুলাই) সকালে শ্রমিকরা খাদ্যগুদামে কাজ করতে এলে তাদেরকে ছাঁটাই করা হয়েছে জানিয়ে কাজে বাধা দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে চাইলে বাধার বিষয়ে কোন কিছু না বলায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। এতে সাময়িকভাবে খাদ্যগুদামে আসা একাধিক ট্রাক থেকে চাল খালাসের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে ডাকা হয়।
জানা গেছে, খোকন আলী, মোখছেদুল, নুর আলম, সিরাজুল, জয়নুল ও বাবুল নামের ছয়জন শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে ওই খাদ্যগুদামে মালামাল লোড আনলোডের কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা কাজের জন্য এলে তাদের ছাটাই করা হয়েছে জানিয়ে কাজে বাধা দেওয়া হয়। ফলে ছাটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা এক জোট হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। খবর পেয়ে সেখানে ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিক ও অন্যান্যদের কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিয়াউল হক শাহ।
ভুক্তভোগী খোকন আলী জানান, সরকারিভাবে ২০২৩ সাল থেকে ট্রাক থেকে মালমাল উঠানোর জন্য টন প্রতি ১৩০ এবং নামানো বাবদ ১২০ টাকা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই বছরের ২৫ মে টেন্ডারের মাধ্যমে সৈয়দপুর খাদ্য গুদামে মালামাল হ্যান্ডেলিং ও পরিবহন কাজে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পায় নীলফামারীর মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঠিকাদার শ্রমিকদের সেই নির্ধারিত মজুরি না দিয়ে আমাদের ৪৭ টাকা করে মজুরি দিয়ে আসছে। এছাড়া মজুরি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে পরিশোধের কথা বলা হলেও ওই ঠিকাদার তা করছে না। ঠিকাদারের এসব অনিয়মের বিষয় জানিয়ে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। এ কারণেই তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
নূর আলম অন্য এক শ্রমিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে আমরা কাজ করছি। আজ হঠাৎ করে বলছে আমদের ছাঁটাই করা হয়েছে । আমরা এখন কোথায় যাবো। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন মজুরি কম দেওয়া ও ঠিকাদারের অনিয়মের প্রতিবাদ করাতেই সৈয়দপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুজ্জামানের যোগসাজশে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এভাবে ছাঁটাই করায় ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
মজুরি কম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার খালেকুজ্জামান বলেন, ওই ছয় শ্রমিক লাগাতার তিন দিন কাজে অনুপস্থিত ছিল। ফলে খাদ্যগুদামে মালামাল উঠানো ও নামানো কাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই তাদেরকে সাময়িকভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে।
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুজ্জামান বলেন, আমরা কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেই না। কাজের জন্য সরকারিভাবে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ঠিকাদারই শ্রমিক নিয়োগ করে আমাদের কাজ বুঝে দেন। তাই বিষয়টি ঠিকাদার ও শ্রমিকদের। এতে আমার করণীয় কিছু নেই।
সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিয়াউল হক শাহ বলেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। যেহেতু ছাঁটাইয়ের বিষয়টি শ্রমিকদের লিখিতভাবে এখনো জানানো হয়নি তাই তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।